৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে আর এন টি হাইস্কুলের ‘সভাপতি’ আবারও বদল! |

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেপুর আর এন টি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও রদবদল হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের এক চিঠিতে নবীনগরের ইউএনও একরামুল ছিদ্দিককে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি মনোনয়ন দেওয়া হলেও মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পার না হতেই বোর্ডের অনুরূপ আরেকটি চিঠিতে নবীনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক এবার ‘সভাপতি’ মনোনয়ন দেওয়া হয়।

দুই দিনের মধ্যে সভাপতি পদে দুইজনকে বোর্ড কর্তৃপক্ষের এমন রহস্যজনক মনোনায়ন দেওয়ার ঘটনাটিকে ‘ভানুমতির খেইল’ অভিহিত করে ইতিমধ্যেই এলাকাবাসী ঘটনাটিকে ফেসবুকে ভাইরাল করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল আমীন খান সম্প্রতি প্রকাশ্যে দিবালোকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেকের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার পর ওই বিদ্যালয়ের এডহক কমিটিতে ‘সভাপতি’ নির্বাচন নিয়ে নানা নাটকীয় ঘটনার পর সর্বশেষ শিক্ষকের ওপর হামলাকারীকেই কর্তৃপক্ষ ‘সভাপতি’ মনোনয়ন দিলেন। এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের একজন বিদ্যালয় পরিদর্শকের স্বাক্ষরযুক্ত একটি চিঠিতে গত ৪ এপ্রিল নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একরামুল ছিদ্দিককে বিদ্যালয়টির সভাপতি মনোনয়নসহ মোট চারজনকে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।  চিঠিতে বোর্ড কর্তৃক সভাপতি মনোনয়নের পাশাপাশি পদাধিকার বলে বিদ্যালয়টির সদস্য সচিব মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের লাঞ্ছিত হওয়া প্রধান শিক্ষক আল আমীন খানকে। এছাড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মনোনীত সদস্য হিসেবে শাহীন আরা বেগম (শিক্ষক প্রতিনিধি) ও ইউএনও’র মনোনীত সদস্য হিসেবে রাশিদা ছিদ্দিকাকে (অভিভাবক প্রতিনিধি) নির্বাচিত করা হয়।

কিন্তু এই চিঠির মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আজ ৬ এপ্রিল কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুরূপ আরেকটি চিঠিতে সবকিছু ঠিক রেখে শুধুমাত্র সভাপতি পদে ইউএনও’র পরিবর্তে সেখানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেককে  মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করেও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুস সালাম ও নবীনগরের ইউএনও একরামুল ছিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় পর্যবেক্ষক কে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির নামে কুরাজনীতির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে যারা বোর্ড চেয়ারম্যান ও নবীনগরের ইউএনওকে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন, সেটি নবীনগরের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দুই পক্ষের ক্ষমতা ও নোংরা রাজনীতির লড়াইয়ে সরকারের এ দুটি প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সাধারণ মানুষের কাছে মারাত্মকভাবে ‘বিতর্কিত’ করা হলো।

প্রসঙ্গত, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেককে বিদ্যালয়টির এডহক কমিটিতে ‘সভাপতি’ নির্বাচিত করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় এমপি এবাদুল করিম বুলবুল গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি ‘ডিও’ দেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমপি’র ডিওকে উপেক্ষা করে কমিটির নাম জমা দিতে দেরী করায়, গত ১৬ মার্চ উপজেলা পরিষদ গেটে দিনে দুপুরে প্রধান শিক্ষক আল আমীন খানকে মারধর করেন ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক।

এ ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি নিয়ে ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গত ২০ মার্চ বর্তমান সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুল ও সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদলসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এক সালিসি সভায় হামলাকারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক ও হামলার শিকার প্রধান শিক্ষক আল আমীন খানকে ‘করমর্দন’ করিয়ে ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনাটির নিষ্পত্তি করা হয়। পরে সভায় হামলাকারী জাকির হোসেন সাদেককেই বিদ্যালয়টির সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। যা গত ৪ এপ্রিল বাতিল করে ইউএনওকে সভাপতি মনোনয়ন দেয় কুমিল্লা বোর্ড। তবে বোর্ডের ওই সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ ওপর মহলের চাপে ৪৮ ঘণ্টাও ধরে রাখতে পারেনি।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *