দায়িত্বে অবহেলায় শাল্লার ওসি সাময়িক বরখাস্ত |

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে হেফাজত অনুসারীদের হামলা, লুটপাট ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ঘটনায় পাশের দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলামকে মৌলভীবাজার জেলায় বদলি করা হয়েছে।

এদিকে নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে পুলিশের উপস্থিতিতে হেনস্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে ধর্মপাশা উপজেলায় এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শাল্লার ওসি সাময়িক বরখাস্ত : হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে শাল্লা উপজেলা নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাসের ফেসবুক পোস্টের জের ধরে গত ১৭ মার্চ সকালে দিরাই উপজেলার নাচনী, চণ্ডিপুর, সন্তোষপুর, সরমঙ্গল, ধনপুর ও শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মসজিদ থেকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালানো হয়। এলাকাবাসী পুলিশ ও প্রশাসনকে তাত্ক্ষণিকভাবে জানালেও তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনেন গ্রামবাসী, বিভিন্ন সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তদন্ত করে শাল্লা ও দিরাই থানার ওসির গাফিলতি পায়।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কে বলেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তদন্ত করার পর শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত এবং দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলামকে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন।

ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশের উপস্থিতিতে হেনস্তা : ধরমপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজারে হেনস্তার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-আন্তর্জান্তিকবিষয়ক সম্পাদক ও এফ রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল খান (২৪)। তাঁর বাড়ি জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আফজাল খান গত ২৯ মার্চ দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হেফাজতের তাণ্ডবের কয়েকটি ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে তিনি জয়শ্রী বাজারে গেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাদে হরিপুর সাতঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসেম আলমের ছেলে মাদরাসাপড়ুয়া আল মুজাহিদ তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনেন। মুজাহিদ ৩০ থেকে ৪০ জনকে নিয়ে কেন ওই পোস্ট দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা জানতে চান আফজালের কাছে। এক পর্যায়ে মুজাহিদ ওই ছাত্রলীগ নেতার শার্টের কলার ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। পরে তাঁকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে ধরমপাশা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আফজালের বিপক্ষে জড়ো হওয়া মানুষকে শান্ত করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন ধরমপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, আফজাল খানকে হাতকড়া পরানো হয় এবং উপস্থিত লোকজনের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে পুলিশ। এরপর তাঁকে ধরমপাশা থানায় নেওয়া হয়। আফজালের পরিচয় জানার পর তাঁর হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। থানায় নেওয়ার পর পুরো ঘটনার বিবরণ কাগজে লিখে সই দিয়ে ছাড়া পান তিনি।

এ ঘটনায় ধরমপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার আবুল হাসেম আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নিন্দা জানিয়ে হাসেম আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

জানা গেছে, হাসেম আলম একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সম্পর্কে চাচা হন তিনি। রতনের হাত ধরেই কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন হাসেম। তাঁর ছেলে মুজাহিদ স্থানীয়ভাবে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আবুল হাসেম আলমকে ফোন দিলে তাঁর ছেলে আবুল কাশেম ফোন ধরে নিজেকে এমপি রতনের চাচাতো ভাই হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁর বাবা কখনো জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

ধরমপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ নেতা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ছাত্রলীগ নেতা আফজালের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *