জীবিত থেকেও ভোটার তালিকায় মৃত, মিলছে না বিধবা ভাতা |

জীবিত থেকে বরিশালের মুলাদী উপজেলার ৬৫ বছর বয়সী শানু বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধকে ভোটার তালিকায় মৃত দেখানো হয়েছে। ফলে গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এই নারীর বিধবা ভাতা। এক সপ্তাহ ধরে তিনি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরেও এর কোনো সমাধান পাননি শানু বেগম। তিনি উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের মৃত মন্নান ফরাজির স্ত্রী। তবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকায় পুনরায় তার নাম উঠাতে আবেদন করতে হবে। আর এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময়ের প্রয়োজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়ে শানু বেগমকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তার নাম কর্তন করা হয়। এতে করে গত এক বছর ধরে শানু বেগম বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না। কয়েক দিন পার্শ্ববর্তী এলাকার এক বিধবা নারীর সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে জানতে পারেন বিধবা ভাতা বন্ধ হয়নি। তাই বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় কাজিরচর ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন ভোটার তালিকা অনুযায়ী শানু বেগম মৃত থাকায় তার ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। 

শানু বেগম জানান, ২২ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। দুই ছেলেই বেকার। মেয়েদের অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বরের পেছনে ঘুরে ঘুরে বিধবা ভাতার তালিকায় নাম ওঠান। সেই অর্থ দিয়ে সংসার চালাচ্ছিলাম। কিন্তু এক বছর ধরে ভাতা না পাওয়ায় প্রথমে ভাবছিলাম সরকারই ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে গ্রামের এক বিধবা নারীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ওই নারী নিয়মিত বিধবা ভাতার টাকা পাচ্ছেন। এরপর তিনি ছুটে যান ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। সেখানে জানতে পারেন ২০১৯ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় তাঁকে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্যই তাঁর নামে আর ভাতার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। 

শানু বেগম বলেন, ‘আমি সকলকে এতো করে কইলাম যে মুইতো মরি নাই, বাইচ্চাই আছি, কিন্তু মোর কথা কেউ হোনে না। সবাই কয় কাগজপত্রে নাহি আমি মারা গেছি। তাই এক বছর ধরে সরকারের দেওয়া আমার বিধবা ভাতা পাইতাছি না।’
 
মুলাদীর ৭নং কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. মন্টু বিশ্বাস জানান, ‘২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারী চরকমিশনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দীন। তিনি ওই সময়ে শানুকে মৃত হিসেবে উল্লেখ করেন আর এতে করে ভোটার হালনাগাদ তালিকায় তিনি মৃত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়। সেই কারণে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির অনুকূলে কোনো সরকারি বরাদ্দ দেওয়া যায় না। তাই তার বিধবা ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। 

তথ্য সংগ্রহকারী শিক্ষক জীবিত শানু বেগমকে হয়তো মৃত উল্লেখ করেছেন। এ কারণে হালনাগাদ তালিকায় শানু বেগমকে মৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। শানু বেগমকে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. শওকত আলী বলেন, ‘২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তথ্য সংগ্রহকারী শানু বেগমকে হয়তো মৃত উল্লেখ করেছেন। এ কারণে হালনাগাদ তালিকায় শানু বেগমকে মৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। শানু বেগমকে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে পুনরায় তার নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তিতে কিছুটা সময় লাগবে। 


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *