সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন হচ্ছে মুজিবনগর স্মৃতিকেন্দ্রের

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল – সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন হচ্ছে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মুজিবনগরে সংঘটিত ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পটভূমি দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ জন্য ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। প্রস্তাবটি নিয়ে আজ (১৯ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। জুমের মাধ্যমে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন আল রশিদ। গত ১২ এপ্রিল জারি করা হয়েছে সভার কার্যপত্র। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর হতে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদফতর।

সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের প্রবাসী সরকার মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে ১৭ এপ্রিল শপথ নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বৈদনাথতলা গ্রামের নামকরণ হয় মুজিবনগর। মুক্তিযুদ্ধের পরেই সরকার মুজিবনগরকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ নেয়। ১৯৭৩ সালে ৩১ আগস্ট সরকার মুজিবনগরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নির্দেশ দেয়। ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে যায়।

আরও পড়ুন : মামুনুল হকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

এরপর এইচ এম এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে মুজিবনগরে স্মৃতিসৌধের কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং এ জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০ দশমিক ১০ একর জমির উপর স্মৃতিসৌধ স্থাপিত। ২৩টি কংক্রিটের ত্রিকোণাকার স্তম্ভ সমন্বয়ে এ স্মৃতিসৌধ নির্মিত। স্থপতি তানভীর কবিরের নকশায় এ সৌধটিকে উদীয়মান সূর্যের প্রতীক বলে মনে হয়। ২৩টি স্তম্ভ পাকিস্তানের ২৩ বছর শাসনের প্রতীক। এই ২৩ বছরে বাঙালি জাতি ধীরে ধীরে যে সংগ্রাম গড়ে তোলে তার প্রতীকও ২৩টি স্তম্ভ। ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় ১৬০ ফুট ব্যাসে বেদীটি নির্মিত। বেদীর অর্ধাংশে স্তম্ভগুলো সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান। সমকোণী ত্রিভুজাকৃতির এ স্তম্ভগুলোর প্রথমটির উচ্চতা ৯ ফুট এবং এর দৈর্ঘ্য ২০ ফুট।পরবর্তী প্রতিটি স্তম্ভ উচ্চতায় এক ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৯ ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পেয়ে ২৩তম স্তম্ভের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্যও হয়েছে ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। গোলাকার বেদী ভূতল থেকে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতায় তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমটির উচ্চতা ভুমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি , দ্বিতীয়টির ৩ফুট ও তৃতীয়টির ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার বেদীর অপরাংশ অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত দ্বারা স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদকে বুঝানো হয়েছে। তিন ফুট উচ্চতার বেদীর অপরাংশ অসংখ্য নুড়ি পাথরে আবৃত। এটি মুক্তিযোদ্ধা সাত কোটি বাঙ্গালির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের প্রতীক। মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণের স্থানটি লাল সিরামিকের ইট দ্বারা আয়তক্ষেত্রে চিহিৃত করা হয়েছে। বেদীতে আরোহণের সোপান নয়টি ধাপে বিভক্ত। সোপানের এ নয়টি ধাপ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতির প্রতীক।

বর্তমানে স্থাপিত স্মৃতি কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি স্থাপনার কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। স্মৃতিকেন্দ্রটি বিশ্বমানে উন্নীত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ৪০৯ কোটি ৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনে।

পিইসি সভার কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশনের সেক্টর ডিভিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৫১ একর জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৬৫ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। জমির মূল্য সংক্রান্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ডকুমেন্ট ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযুক্ত করা হয়নি। এছাড়া ১৮ হাজার ৮২৫ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ৭৫ কোটি ৯ লাখ এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৩ বর্গমিটার অনাবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ১৪০ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যয়ের ভিত্তি নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য নির্মাণ ২৪টি বাবদ ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, পেইন্টিংকরণ, ম্যুরাল, ডিওরোমা, মানচিত্র ৭৫টি বাবদ ১৫ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতায়ন খাতে ২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অধিক মর্মে প্রতীয়মান হয়। আইটসোর্সিং খাতে ২৯৪ জনমাসের জন্য ৫২ লাখ ৯২ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অফিসারদের বেতন এবং কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৬৩ লাখ এবং ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল জনবল নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ ডিপিপিতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের রাজস্ব অংশে ভ্রমণভাতা খাতে ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা, অফিস ভাড়া বাবদ ৭৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বিদ্যমান স্থাপনাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা, বীজ ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ খাতে ৩ কোটি টাকা, কনসালটেন্সি খাতে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলধন খাতে বৃক্ষ ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব ব্যয়ের যৌক্তিকতা বিষয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। এছাড়া বৈদেশিক ভ্রমনের প্রশিক্ষণ শিক্ষা ভ্রমণের জন্য ৬০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর প্রয়োজনীয়তাও আলোচনা করা যেতে পারে পিইসি সভায়।

সূত্র : সারাবাংলা
এন এইচ, ১৯ এপ্রিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *