টেক্সাসে এক পরিবারের ৬ বাংলাদেশির লাশ |

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি বাড়ি থেকে একই পরিবারের ছয় বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের ধারণা, পরিবারের দুই ছেলে অন্য সদস্যদের হত্যা করে নিজেরাও আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় শুধু টেক্সাস নয়, সারা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। পুলিশ বলছে, শনিবার কোনো একটি সময় এই হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। তবে ঘটনাটি সবাই জানতে পেরেছে সোমবার ঘুম ভেঙে।

মৃতরা হলেন তাওহীদুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী আইরিন ইসলাম, তিন সন্তান তানভীর তাওহীদ, ফারবিন তাওহীদ ও ফারহান তাওহীদ। এমনকি আইরিন ইসলামের বৃদ্ধা মা আলতাফুন নেসাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

টেক্সাসের ডালাসের অ্যালেন হোমে বসবাস করতেন বাংলাদেশি দম্পতি তাওহীদুল ইসলাম ও আইরিন ইসলাম। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আইরিন ইসলামের মা আলতাফুন নেসা বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন মেয়ের কাছে থাকার জন্য। দেশে ফেরার কথা থাকলেও করোনার কারণে তিনি আটকা পড়েছিলেন।

পুলিশের মুখপাত্র সার্জেন্ট জন ফেল্টি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য বলছে তাওহীদুল ইসলামের দুই ছেলে নিজেরা ঠিক করেছিলেন যে তাঁরা আত্মহত্যা করবেন; সেই সঙ্গে পুরো পরিবারকেও তাঁরা মেরে ফেলবেন। সে অনুযায়ী তাঁরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসংক্রান্ত একটি সুইসাইডাল নোট রেখে গেছেন ১৯ বছর বয়সী ছোট ছেলে ফারহান তাওহীদ; যেখানে তিনি নিজেকে মানসিক বিকারগ্রস্ত বলে উল্লেখ করেছেন। পুলিশ বলছে, এই দুই ভাইয়ের একজন সম্প্রতি বন্দুক কিনেছেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের কর্মকর্তা শাওন আহসান অন্য কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর বেশ অনেক্ষণ যেন আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না।’ তিনি জানান, প্রায় ১১ বছর ধরে পরিবারটিকে তিনি চেনেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার তাওহীদুল ইসলাম তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, তিন সন্তানকে নিয়ে তাঁকে সব সময়ই গর্বিত হতে দেখেছি।

প্রতিবেশী আহমেদ হোসেন জানান, নিউ ইয়র্ক থেকে পরিবারটি সাত-আট বছর আগে টেক্সাসের ডালাসে যায়। এর পর থেকেই ওই এলাকায় বসবাস করত। আহমেদ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ হোসেন বলেন, ‘নিহত আইরিন ইসলাম সব সময়ই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে গল্প করতেন। কিভাবে তারা ভালো রেজাল্ট করছে, কিভাবে স্কলারশিপ নিয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে, এসব বলতেন। কিন্তু তাঁর সন্তানদের কেউ এমন কিছু করতে পারে, ধারণা করতে পারছি না।’

তবে নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী আইরিন ইসলামের নিকটাত্মীয় কামাল পাশা কে বলেন, ‘ছেলে দুটি ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকেই ডিপ্রেশনের ওষুধ খায়। তাদের দুজনের নানা সমস্যা ছিল বলে জানতাম। কিছুদিন আগেও তারা নিউ ইয়র্কে এসেছিল। আমি সব সময় কাছ থেকে দেখেছি। ছেলে দুটি যদি সবাইকে মেরে নিজেরা আত্মহত্যা করে, সেটা অসম্ভব নয়।’ পাবনা জেলা সমিতির সভাপতি কামাল পাশা আরো বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর থেকে মানসিকভাবে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছি। এই পরিবারটির সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক।’

মৃত আইরিন ইসলামের ছোট ভাই এমেড রহমান আতা নিউ ইয়র্কের এলমহার্স্টে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে ভীষণ ভেঙে পড়েছেন তিনি। কথা বলার মতো শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও পাবনার বাসিন্দা গোপাল সান্যাল বলেন, ‘মর্মান্তিক ঘটনাটির শিকার পরিবারটির বাড়ি পাবনার দোহারপাড়ায়। দোহারপাড়ার বিখ্যাত জিয়া হায়দার, রশিদ হায়দার উনাদের নিকটাত্মীয় বলে জেনেছি। এমন ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’

পাবনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যপারে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নিহত আলতাফুন নেসার বড় ছেলে ও আইরিন ইসলামের ভাই আরিফুর রহমান আলফা বলেন, ‘আমার বোন কেবল তার পরিবারই নয়, আমাদেরও সব কিছু দেখভাল করত। তার নিজের সংসারে কখনোই অশান্তি ছিল না। ছেলে-মেয়েরাও প্রতিভাবান, মেধাবী ও ভদ্র। তারা বাবা-মায়ের পাশাপাশি সেখানে বেড়াতে যাওয়া তাদের নানিরও যত্ন নিত। এমন ছেলেরা বাড়ির সবাইকে হত্যা করেছে, তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না।’

নিহত আলতাফুন নেসার ছোট ছেলে আবুল কালাম আজাদ হিরণ বলেন, ‘মা প্রায় দুই বছর আগে বোনের বাড়িতে গিয়েছেন। করোনার কারণে আটকে গিয়েছিলেন। গত ১ এপ্রিল তাঁর দেশে ফেরার কথা ছিল, কিন্তু যাঁর সঙ্গে আসার কথা ছিল তিনি আসতে না পারায় ৭ এপ্রিল তাঁর পাবনায় (বাড়ি) ফেরার কথা ছিল।’ পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর আগে পুরান ঢাকার তাওহীদুল ইসলামের সঙ্গে পাবনা শহরতলির দোহারপাড়ার মেয়ে আইরিন ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আমেরিকাপ্রবাসী এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল সুখী পরিবার। দুই বছর আগে পাবনা থেকে মা আলতাফুন নেসাকে ডালাসে নিয়ে যান মেয়ে আইরিন।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *