২৭ বছরের ‘অসাধারণ’ সম্পর্কের ইতি |

বিয়ের ২৫ বছর পূর্তিতে দুজনের ছবি দিয়ে আবেগঘন টুইট করেছিলেন মেলিন্ডা গেটস। সেখানেই বিল গেটস লিখেছিলেন, ‘আমরা আরো ২৫ বছর এভাবে কাটাতে চাই।’ এর দুই বছর চার মাস দুই দিন পর তাঁরা বললেন, ‘দম্পতি হিসেবে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব, এমনটা আর বিশ্বাস করি না।’

১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩ মে। প্রায় সাড়ে ২৭ বছরের দাম্পত্যের ইতি টানলেন বিল গেটস-মেলিন্ডা গেটস। বিয়ের আগে চুটিয়ে প্রেম করেছেন আরো সাত বছর। সে হিসাবে ৩৪ বছরের যৌথ জীবন। তাঁদের সংসার আলো করে এসেছে তিন ছেলে-মেয়ে। বড় মেয়ে জেনিফার গেটস (২৫), ছেলে রোরি জন গেটস (২১) এবং ছোট মেয়ে ফিবি অ্যাডেল গেটসকে (১৮) নিয়ে পরম তৃপ্তির কথা আছে তাঁদের বিচ্ছেদের ঘোষণায়ও, ‘গত ২৭ বছরে আমরা অসাধারণ তিনটি সন্তান পেয়েছি।’

এমন ‘পূর্ণ’ দাম্পত্যে দাঁড়ি পড়ায় সারা বিশ্বই বলা যায় খানিকটা চমকে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার জরাজীর্ণ কোনো শহরতলির কাদায় মাখামাখি রাস্তা থেকে ডাভোসের ঝলমলে ককটেল পার্টিতে উপস্থিত এই আদর্শ জুটির সংসারে ভাঙনের খবরে কিছুটা হতবাকও যেন বিশ্ব।

বিল-মেলিন্ডার বিয়ের ২৫ বছরে, অর্থাৎ ২০১৯ সালে নেটফ্লিক্সের তিন পর্বের ‘ইনসাইড বিলস ব্রেইন : ডিকোডিং বিল গেটস’ তথ্যচিত্রে বিল ও মেলিন্ডা—উভয়েই কবুল করেছিলেন, তাঁরা সত্যিকারের সমান অংশীদার। আর ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট’ জার্নালের কাছে বিলের সরল স্বীকারোক্তি ছিল, তাঁর জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত বিয়ে করা। মাইক্রোসফট তাঁর জীবনে বড় অবদান রাখলেও সেটির অবস্থান দুই নম্বরে। সময়ের সঙ্গে কী এমন ঘটল যে সেই অবস্থানের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল—এ প্রশ্ন বিশ্বের কোটি মানুষের মনে। তবে এর জবাব হয়তো অধরাই থেকে যাবে। বিল-মেলিন্ডা তাঁদের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসরকে মর্যাদা দেওয়ারও আবেদন করেছেন।

তবু সব বিচারেই সফল দুই মানুষ বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের দাম্পত্যের যে মনোহর রূপ দেখে অভ্যস্ত বিশ্ববাসী, তার ওপর বিচ্ছেদের কালো মেঘ অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের এত দিনের যৌথ জীবনের ভবিষ্যৎ কিভাবে নির্ধারিত হবে? তাঁদের প্রতিষ্ঠিত (২০০০ সালে) বিশ্বের অন্যতম অর্থশালী দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কী হবে? আর বিল গেটসের অঢেল সম্পদের বণ্টনই বা হবে কিভাবে?

অবশ্য এর জবাব আছে বিল ও মেলিন্ডার ঘোষণায়। তাঁরা বলেছেন, ‘এমন একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি, যে ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে মানুষকে স্বাস্থ্যকর ও সক্ষম করে গড়ে তুলতে কাজ করছে। আমরা যে বিশ্বাস থেকে ওই ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু করেছি, সেটা থাকবে। এই ফাউন্ডেশনের কাজ একসঙ্গে চালিয়ে যাব।’

বিল-মেলিন্ডার বিচ্ছেদের ঘোষণার পর আলোচনায় উঠে এসেছেন তাঁদের সন্তানরাও। এ পটভূমিতে মেয়ে জেনিফার বলেছেন, মা-বাবার বিচ্ছেদের ঘোষণায় পুরো পরিবার কঠিন সময় পার করছে। ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এ পরিস্থিতিতে কিভাবে আবেগ সামলানো যায় এবং পরিবারের সদস্যদের সামলে রাখা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি। এতে আমাকে সুযোগ ও সমর্থন দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।’ অন্যদিকে জোর আলোচনা চলছে ধনকুবের দম্পতির বিচ্ছেদে তাঁদের সন্তানরা কী পরিমাণ সম্পদের মালিক হচ্ছেন, তা নিয়েও। জানা যাচ্ছে, মা-বাবার পাহাড় সমান সম্পদের খুব সামান্য অংশই পাচ্ছেন তাঁরা। তিন ভাই-বোন পাবেন এক কোটি মার্কিন ডলার করে। বিল ও মেলিন্ডার বাকি অর্থ যাবে ট্রাস্টে।

ফোর্বস সাময়িকীর তথ্য মতে, মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এখন বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মেলিন্ডার সঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই, শিশুদের টিকাদান ইত্যাদিতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে। এ ছাড়া বিল গেটস বিশ্বের আরেক ধনকুবের ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে ‘দ্য গিভিং প্লেজ’ উদ্যোগেও জড়িত। এই উদ্যোগের লক্ষ্য বিশ্বের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সম্পদের একটি বড় অংশ দাতব্য কাজে লাগানো।

টুইটারে একত্রেই বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। তাঁরা অকপটে লিখেছেন, ‘অনেক ভাবনা-চিন্তা এবং আমাদের সম্পর্ককে বাঁচানোর অনেক চেষ্টার পর বিবাহিত জীবনের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিলাম।’ তাঁদের মতে, এই সম্পর্ক আর এগিয়ে নেওয়ার উপায় নেই। দম্পতি হিসেবে তাঁদের আর নতুন কিছু পাওয়ার আছে বলে বিশ্বাস করেন না দুজনই। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, বিজনেস ইনসাইডার, চিট শিট, ওয়ার্ল্ড সেলেব, দ্য থিংকস, পিপল।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *