গণপরিবহন ফের রাস্তায়, যাত্রী কম |

করোনাকালে কঠোর বিধি-নিষেধের তৃতীয় দিনে সরকার সব মহানগরীতে গণপরিবহন চলাচল শিথিল করায় ফের রাস্তায় নেমেছে বাস ও মিনিবাস। গতকাল বুধবার ভোর থেকে বাস চলাচল শুরু করলেও যাত্রীর তেমন চাপ ছিল না। এর পরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি বাসের চালক-সহকারীসহ যাত্রীদের। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম করা হলেও কেউ কেউ নিচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া।

সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর পরিবাগে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে দেখা যায়, বাসের প্রতিটি আসনেই যাত্রী বসানো হয়েছে। সহকারীর কাছে বিষয়টি জানেত চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা না বসলে আমরা কী করব?’ যাত্রী কফিলউদ্দিন বলেন, করোনা নিয়ে ভাবার সময় নেই। রাজধানীর মিরপুর এলাকার কয়েকটি পরিবহনের সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো বাসেই তাঁরা জীবাণুনাশক ব্যবহার করেননি। কেন করেননি জানেত চাইলে ক্যান্টনমেন্ট পরিবহনের চালক আবু আলম বলেন, যাত্রীই তো নেই, জীবাণুনাশক দিয়ে কী হবে?

কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মো. সোহেল পুরান ঢাকার বংশালে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। তাঁর এক আত্মীয় মারা গেছেন। এ কারণে জরুরি বাড়ি যাওয়ার জন্য গতকাল সকাল ১১টার দিকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। এসে দেখেন দূরপাল্লার বাস চলছে না। এ কারণে তিনি পড়েন বেকায়দায়। সোহেল বলেন, ‘আইসা দেখি বাস চলতাছে না। বিকল্প হিসেবে মাইক্রোবাস দিয়া যাইতে চাইছিলাম। কিন্তু ৭০০ টাকা ভাড়া চায়। বাসে গেলে ২০০ টাকা দিয়া যাইতে পারতাম। এ কারণে না গিয়া বাসায় ফিরা যামু।’

একই সময় সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন কুমিল্লার চান্দিনার জাকির। তিনি জানান, পাঁচ দিন আগে ঢাকায় আসেন কাজের খোঁজে। তিনি উঠেছেন খিলগাঁওয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি শুনেছেন গণপরিবহন চলবে, এ কারণে সায়েদাবাদে এসেছেন। এসে দেখেন গাড়ি চলছে না। তিনি বলেন, ‘মাইক্রোবাসে যাওয়া যায়, কিন্তু ভাড়া চাইছে ৭০০ টাকা করে। বাসে গেলে ৭০-৮০  টাকায় চলে যাওয়া যায়। ভাবছি, আবার আত্মীয়ের বাসায় ফিরে যাব।’

গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সায়েদাবাদ এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার কোনো গাড়ি চলছে না। আবার কোনো গাড়ি স্ট্যান্ডেও ঢুকছে না। তবে দূর-দূরান্তের মানুষ এসেছিল বাড়ি ফেরার জন্য। দেখা গেছে, সায়েদাবাদ স্ট্যান্ডে কয়েকটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে আছে। মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের লোকজন যাত্রীদের ডাকছে বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য। পুরো স্ট্যান্ডে বিভিন্ন জেলার বাস পার্ক করে রাখা আছে।

এদিকে বলাকা পরিবহনের এক কর্মী বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুুযায়ী ঢাকা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস চলাচলকে সিটি সার্ভিসের মধ্যেই ধরা হচ্ছে, কিন্তু গতকাল সকালে আমরা গাড়ি নিয়ে বের হলে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের লোকজন গাড়ি আটকে দেয়। তারা গাজীপুর যেতে দেয়নি। ফলে বলাকা পরিবহনের সব গাড়ি সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে পার্ক করে রাখা হয়েছে।’   

সিটি সার্ভিসের বাসগুলো রাজধানীর মধ্যে চলাচলের কথা থাকলেও সকালের দিকে সেই বিধি-নিষেধ মানেনি। রাজধানীর অন্যতম প্রবেশমুখ গাবতলীতে সকালের দিকে অনেকটাই ঢিলেঢালা ছিল বিধি-নিষেধ। তবে বেলা গড়াতেই শুরু হয় কড়াকড়ি। দুপুর ১২টা থেকে আমিনবাজার ব্রিজের আগে থেকে সাভার অভিমুখী বাসগুলো ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে গতকাল সকাল থেকেই গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

গতকাল খুব সকালে সাভার, ধামরাই থেকে যাত্রী নিয়ে সিটি সার্ভিসের বাসগুলো ঢাকায় ঢোকে এবং গাবতলী থেকে ওই সব এলাকার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে সাভার ও ধামরাইগামী বাসগুলো গাবতলী বাস টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছিল। ১২টার পর বাসগুলোকে আটকে দেয় পুলিশ। তবে সিটি সার্ভিসের কোনো বাস ঢাকায় ঢুকতে তখন পর্যন্ত বাধার মুখে পড়েনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আমরা কিছুটা নমনীয় ছিলাম। তবে কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই দেখি অনেক বাস ঢাকার বাইরে যেতে চায়। তাই আমরা কঠোর অবস্থান নেই। আর রাজধানী থেকে যদি বাসগুলো বের হতে না পারে, তাহলে রাজধানীতে ঢোকার নিয়ন্ত্রণও করতে হবে না।’

জানা যায়, রাজধানীর সিটি সার্ভিসের অনেক বাসই গাবতলী দিয়ে সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া, বাইপাইল, চন্দ্রাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার সময়ে এই বাসগুলো গাবতলী পার হতে পারবে না।  

তবে আমিনবাজারের দিক দিয়ে ঢুকতে ও বের হতে সিটি সার্ভিসের বাসগুলোকে বাধার মুখে পড়তে হলেও তারা ঠিকই বিকল্প পথ বের করে নেয়। আশুলিয়া, বাইপাইল ও চন্দ্রা অভিমুখী সিটি সার্ভিসের বাসগুলো মাজার রোড দিয়ে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ হয়ে ঠিকই চলাচল করেছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে দেখা যায়, ওয়েলকাম ট্রান্সপোর্ট ও আলিফ পরিবহনের বাসগুলো সহজেই রাজধানীর বাইরে যাচ্ছে ও ঢুকছে।

আলিফ পরিবহনের একজন সুপারভাইজার নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মেইন রাস্তায় মাঝেমধ্যে আটকাচ্ছে, কিন্তু চিপাচাপা দিয়ে চলে যাচ্ছি। তবে যাত্রী খুব একটা নেই।’

গতকাল দুপুরে দেখা যায়, রাজধানীর বাইরে যাওয়ার জন্য মানুষ আমিনবাজার ব্রিজের সামনে ভিড় করেছে। নিম্নবিত্তরা পিকআপ ভাড়া করে সাভার, মানিকগঞ্জ, আরিচা, পাটুরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করছে। আবার কেউ কেউ শেয়ারে প্রাইভেট কার ভাড়া করে গন্তব্যে যাচ্ছে। তবে গাবতলী থেকে সাভার পর্যন্ত লেগুনা চলছিল। সেখানে ছিল মানুষের ভিড়। একটা লেগুনা আসতেই দৌড়াদৌড়ি করে উঠছিল যাত্রীরা। মূল সড়কে চলছিল রিকশাও।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *