দুটি খুন ও সুনসান দুই গ্রাম |

বাদিপক্ষের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি। ছবি:

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তিনলাখপীর বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু সামনে দিয়ে ঢুকে কয়েক কিলোমিটারের পথ নিমবাড়ি। ছোট একটি সেতু পার হয়ে গ্রামে ঢুকতে চোখে পড়ে হামলার শিকার হয়ে ‘বিধ্বস্ত’ একটি বাড়ি।

অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামটিতে ‘বিধ্বস্ত’ এমন বড়ির সংখ্যা অনেক। একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামটিতে এখন একদিকে যেমন হামলা-ভাঙচুরের দৃশ্য তেমনি অনেকটাই সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।

খুনের ঘটনায় সুনসান জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রাম। সেখানকার লতিফ বাড়ি গোষ্ঠীর পুরুষরা একদিকে যেন গ্রামছাড়া অন্যদিকে নারীরাও আছেন আতঙ্কে। হামলার ভয়ে এখন নারীরাও এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। রবিবার ওই এলাকার অর্ধশত নারী সংবাদ সম্মেলন করে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।

নিমবাড়িতে আতঙ্ক

কসবা নিমবাড়ি গ্রামে ২০১৭ সালে পান্ডু গোষ্ঠীর রইছ মিয়া নামে এক ব্যক্তি খুন হন। এ ঘটনায় হওয়া দায়ের করা মামলার সাক্ষী রইছ মিয়ার ভাই ফয়েজ মিয়াকে হত্যা করা হয় এ বছরের ১৩ মার্চ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিমবাড়ি গ্রাম এখন অশান্ত। আসামি পক্ষের বাড়ি ঘরে হামলা-ভাঙচুর বন্ধ হয়নি।

আব্দুর রউফ (৮০) নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আমার তো কোনো অপরাধ নাই। কিন্তু বাদী পক্ষের লোকজন আমার জমির ধান কেটে নিয়েছে।’ লিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘আমাদেরকে এখনো ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভয়ের মধ্যে আছি আমরা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে হামলার কথা শুনেই তাৎক্ষনিকভাবে ওসিকে ফোন করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি জানান, এলাকায় যেন অশান্তি সৃষ্টি না হয় সেদিকে অবশ্য পুলিশের খেয়াল থাকবে।

নারীদের সংবাদ সম্মেলন

ভাই খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হানিফ মুন্সিসহ তার লোকজন চরচারতলা গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অত্যাচার নির্যাতনের প্রতিবাদে রবিবার (০৯ মে) দুপুরে অর্ধশত নারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ওই নারীরা চরচারতলা গ্রামের চারটি বংশের ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নার্গিস বেগম বলেন, ‘গত ২২ জানুয়ারি রাতে চরচারতলা গ্রামের লতিফ বাড়ি ও মুন্সি বাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে ঝগড়া হয়। ওই ঝগড়ায় কে বা কার টেঁটার আঘাতে উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি নিহত হন। পরবর্তীতে জামাল মুন্সির বড়ভাই জাহাঙ্গীর মুন্সি বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আর ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর অমানবিক নির্যাতন চলতে থাকে।

তিনি অভিযোগ করেন, হানিফ মুন্সির নেতৃত্বে লতিফ বাড়ি, খাঁ বাড়ি, খন্দকার বাড়ি ও নাগর বাড়ি বংশের তিন শতাধিক ঘর-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর লুটতরাজ চালানো হয়। ওই চার বংশের ৬০-৬৫টি প্রবাসী পরিবারও এই লুটতরাজের শিকার হয়। হানিফ মুন্সি আওয়ামী লীগের দলীয় পদের অপব্যাবহার করে আমাদেরকে সর্বশান্ত করে পথে বসিয়েছে।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *