শুরু হলো ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০২১

‘মেক হেয়ার, সেল এভরিহোয়্যার’ স্লোগানে আজ (১ এপ্রিল) থেকে রাজধানী আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে শুরু হলো তিন দিনের ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১। যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), আইডিয়া প্রকল্প, এটুআই, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।

বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের চূড়ান্ত পর্যায়ে। ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপোর আয়োজন ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশনের কাজে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্রটি সকলের কাছে তুলে ধরবে।

তিনি আরো বলেন, দেশের বিপুল শ্রমশক্তিকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে স্থানীয় ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। আইসিটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। দেশে এখন স্যামসাং এর উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্টফোন, সনি এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এন্ড্রয়েড টিভিসহ বেশকিছু হোম এপ্লায়েন্স (Home Appliance) তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীগণ ডিজিটাল ডিভাইস তৈরির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের যে সাহস দেখিয়েছেন সেজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের আইসিটি খাতে রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনে তাদেরকে আরো অনেক সাহসী ভূমিকা রাখতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এমপি বলেন, চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব উপযোগী বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আইসিটি ডিভিশন। এছাড়াও তরুণদের দক্ষতা, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন-বিষয়ক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ফর স্কিলস, এমপ্লয়মেন্ট এন্ড এন্টারপ্রেনিওরশিপ’র মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশী বেকার যুব, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবারের এক্সপো ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়েছে। এতে যুক্ত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি গবেষক, উদ্যোক্তা, উদ্ভাবকরা। আপনাদের সকলের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহে এবং অবদানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ।

তিনি আরো বলেন, আজকের এই ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমাদের তরুণ উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবন ও আবিষ্কারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই এক্সপোর আয়োজন।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কতৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, এনডিসি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের আইটি সেক্টর থেকে এক বিলিয়ন রপ্তানী হয়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন রপ্তানির লক্ষমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ তথা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নানামূখী কর্মসূচী নিয়ে সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশেই একটি প্রযুক্তি পণ্য তৈরির একটা হাব তৈরি করা। এলক্ষ্যে আমাদের নিজেদের সক্ষমতা যেমন দেশীয় ভোক্তাদেরকে জানাতে হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও ভোক্তাদেরকেও জানাতে হবে। এটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভূমিকা পালন করছে ‘ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো’।

আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রীনা পারভীন বলেন, শিক্ষার্থী ও তরুণদের জন্য ১০টি আন্তর্জাতিকমানের সেমিনার থাকছে এবারের ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপো-তে। ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপোতে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি জ্ঞানকে বাড়িয়ে নেয়ার জন্য এই কর্মশালাগুলো দারুণ সুযোগ বলেই আমরা মনে করছি। এছাড়াও এক্সপোতে থাকছে নিত্যনতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ। এই সমস্ত আয়োজনই সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে। তবে করোনা মহামারীর কারণে এবারের প্রদর্শনী সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে।

স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা এফ জাবিন বলেন, দেশের তরুণ স্টার্টআপদের উন্নয়নে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড। স্টার্টআপদের উন্নয়ন ও অর্থায়নে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। আমরা ৫০টি স্টার্টআপকে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি। বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীরের পক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।

এবারের এক্সপো উপভোগ করার জন্য অ্যাপ উন্মুক্ত করা হয়েছে। গুগল প্লে স্টোর ও আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে DDIExpo 2021 নামের অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও www.ddiexpo.com ওয়েবসাইট ভিজিট করে যেকোনো সময় ভার্চুয়ালি প্রদর্শনী ঘুরে আসা যাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আজ তিনটি সেমিনার এবং একটি ফোকাস গ্রুপ ডিস্কাশন (এফজিডি) আয়োজন করা হচ্ছে। অনলাইনে অ্যাপ ডাউনলোড করে, কিংবা ফেসবুক পেজে লাইভের মাধ্যমেও এসব সেমিনারে জয়েন করা যাবে।

ডিজিটাল ডিভাইস এন্ড ইনোভেশন এক্সপোর প্লাটিনাম স্পন্সর ইভ্যালি, গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আসুস, ইপসন, স্যামসাং, ফেয়ার ইলেক্ট্রোনিক্স ও ওয়ালটন। সিলিভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হালিমা গ্রুপ, লিও, ওরিক্স বায়োটেক, সনির‌্যাগস, সিডনি সান এবং টিপি লিংক। এছাড়াও ইভেন্টের পার্টনার আইসিটি বিভাগের সকল দপ্তর ও সংস্থা, বেসিস, বাক্কো, ই-ক্যাব, আইএসপিএবি, বিআইজেএফ এবং টিএমজিবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *