মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর ন্যাটোও তাদের সৈন্য সরিয়ে নেবে বলে জানিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পরিণতি কী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করছে ডিডাব্লিউ।
প্রায় ২০ বছর আগে আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবান সরকারকে উৎখাত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি আফগানিস্তানের কোনো পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) মনে করেছেন শর্তসাপেক্ষে এগোনো, যা গত দুই দশকে করা হয়েছে, সেটি আফগানিস্তানে চিরদিনের মতো থেকে যাওয়ার একটা রেসিপি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ১ মের মধ্যে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাইডেনের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে অনেক বিশেষজ্ঞ অবাক হয়েছেন, কারণ তারা আশা করেছিলেন বাইডেন ট্রাম্পের নীতি পালটে দেবেন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে যে চুক্তি হয় তারপর থেকে আফগানিস্তানে সহিংস হামলা বেড়েছে। তালেবান অবশ্য এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে তালেবানের রাজি না হওয়ার বিষয়টি, তাদের ইচ্ছা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ জাগিয়েছে।
তালেবান বলেছে, দেশ থেকে সব মার্কিন সেনা চলে না গেলে তারা ২৪ এপ্রিল থেকে তুরস্কে শুরু হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবে না। ‘তুরস্কে আফগান সম্মেলনের ফলাফল মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নির্ধারণ করবে,’ বলে ডয়চে ভেলেকে জানান কাবুলের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ শফিক হামদাম। তিনি মনে করেন, সম্মেলনে যদি তালেবান ও অন্যান্য আফগানদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন সম্ভব হয় তাহলে আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে সেনা চলে যাওয়ার ক্ষতিটা সামাল দেয়া যাবে। কিন্তু যদি সম্মেলন সেটা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আমার আশঙ্কা।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির নির্বাচিত সরকারকে তালেবানের দয়ার ওপর ছেড়ে দেবে। কারণ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদন বলছে, আফগান সরকার ‘আত্মবিশ্বাসী’ তালেবানের বিরুদ্ধে ‘সমস্যায়’ পড়বে। ওই রিপোর্টে বলা হয় তালেবান ‘সামরিক বিজয় অর্জনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী’।
বিশ্লেষক হামদাম বলেন, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী ‘যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর্থিক ও সামরিক বিষয়ে নির্ভরশীল এবং তাদের সহায়তা ছাড়া তারা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে।
শুধু তালেবান নয়, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসও আফগানিস্তানে শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে। সাংসদ রায়হানা আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আগের চেয়ে তালেবানের শক্তি বেড়েছে। আইএস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শক্তিও বেড়েছে। ফলে আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি ও দায়িত্বহীনভাবে সেনা প্রত্যাহার শুধু আফগানিস্তান নয়, এই অঞ্চল তথা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।’
গত দুই দশকে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে যে সফলতা এসেছে তা হারিয়ে যাওয়ারও শঙ্কা আছে। মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়ে তালেবান একমত হবে কি না তা স্পষ্ট নয়। আজাদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তালেবানকে অনেক বেশি ছাড় দিয়েছে। আফগান জনগণকে এর মূল্য দিতে হবে। তারা অনুভব করছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের পরিত্যাগ করেছে।’
অবশ্য বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ মনে করছে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা আফগানিস্তানকে একটি কঠিন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। ‘শর্তহীনভাবে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের মূল দাবি মেনে নিয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশা করবে, তালেবান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যোগ দেবে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আর কোনো কারণ নেই,’ ডয়চে ভেলেকে বলেন কাবুলের সামরিক বিশেষজ্ঞ আসাদুল্লাহ নাদিম।
এছাড়া বাইডেনের সিদ্ধান্তের কারণে আফগানিস্তানে আরও বড় ভূমিকা রাখতে চাওয়া আঞ্চলিক শক্তিগুলোর জন্য ভালো হবে। পাকিস্তান, ভারত, চীন ও রাশিয়ার আফগানিস্তান নিয়ে নিজস্ব কৌশলগত আগ্রহ আছে, যেটা মার্কিন উপস্থিতি না থাকলে পূরণ করতে সুবিধা হবে।
Source: kalerkantho