মধ্যরাতে গৃহবধূকে চুল কেটে নির্যাতন

মধ্যরাতে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা গৃহবধূ জান্নাত আরা সেতু ওরফে এশাকে নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে। স্বামী সজিব দেশে আসলে তার অপকর্মের ব্যাপারে কথা বলতে গেলেই তাকে নির্যাতন ভোগ করতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার গভীর রাতে সজিব তার বাবা-মার সহায়তায় এশাকে বেদম মারপিটের এক পর্যায়ে হত্যার উদ্দেশে জোর করে চেতনানাশক খাওয়ায়। এসময় এশা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার মাথার চুল, ভুরু কেটে দেওয়া হয়।   এমন অভিযোগে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে।
রবিবার (১৪) মার্চ বিকালে নির্যাতিত গৃহবধূ জান্নাত আরা সেতু ওরফে এশা’র বাবা ইমাম হোসেন বাদী হয়ে স্বামী সজিব মোস্তারী, শ্বশুর নজরুল ইসলাম বিশ্বাস ও শাশুড়ি স্বপ্না বিশ্বাসের নামে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন।
এদিকে নিজের চুল নিজে কেটে স্বামীকে ফাঁসাতে নাটক বলছেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা, তাদের কাছে ওই রাতের অডিও ভিডিও প্রমাণ আছে বলে দাবি তাদের।
পুলিশ জানায়, দক্ষিণ নড়াইলের ইমাম হোসেনের মাধ্যমে মেয়ের নির্যাতনের খবর শুনে শুক্রবার রাত ৩টার দিকে শ্বশুরবাড়ি শহরের দুর্গাপুর বাড়ি থেকে এশাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়ি দক্ষিণ নড়াইলে নিয়ে যায়। পরে শনিবার বিকালে নির্যাতনের অভিযোগে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এশাকে।
নির্যাতিত নারীর পরিবারের অভিযোগ, দুর্গাপুর মহিলা কলেজ এলাকার নজরুল বিশ্বাসের ছেলে অষ্ট্রিয়া প্রবাসী সজিব মুস্তারি সাড়ে চার বছর আগে শহরের দক্ষিণ নড়াইল এলাকার হোসেইন ইমাম তৈমুরের মেয়ে এশাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে। বিয়ের পর কিছুদিন না যেতেই এশা তার স্বামী সজিবের মাদকাসক্তি ও পূর্বের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় জানতে পারে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই এশার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। এ অবস্থার মাঝে গত সাড়ে চার বছরের দাম্পত্য জীবনে এশা দুই সন্তানের মা হলেও তার ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
 
নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এশা বলেন, আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। চুল এবং ভুরু কেটে দেওয়া হয়েছে। জোর করে এক সঙ্গে অনেকগুলো ঘুমের বড়ি খাইয়ে দেওয়া হয়।
এশা’র মা স্বপ্না বিশ্বাসের অভিযোগ, সজিব মুস্তারি ও তার পরিবারের লোকজন শুক্রবার গভীর রাতে আমার মেয়ে এশাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়েছে। পুলিশের সহাতায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নির্যাতিতা নারীর স্বামী সজীব মুস্তারীর পরিবারের অভিযোগ, সজিব অষ্ট্রিয়া থেকে নভেম্বর মাসে নড়াইলের বাড়িতে ছুটিতে আসে। এর পর থেকে এশা সময়ে অসময়ে বিভিন্ন বাহানা করে, কখনো ফ্ল্যাটের, আবার কখনো এশার বাবার ১০-১২ লাখ টাকার দায়-দেনার টাকা পরিশোধ করার। এসব না মেনে নেওয়ায় আত্মহত্যার ভয় দেখায়। কয়েকবার হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার নাটকও করেছে, রাস্তায় এসে চলন্ত গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
স্বামীসহ পরিবারকে ফাঁসাতে নানান ভাবে পরিকল্পনা করে এশা। আইনের আশ্রয় নিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। থানায় অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে এশা ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় স্বামী সজিবসহ পরিবারের সকলকে হুমকি দিয়ে বলে এই চারতলা বাড়ি আমার নামে লিখে দিতে হবে না হলে তোর পরিবারের সবাইকে জেলের ভাত খাওয়াবো।
সজীব মুস্তারীর ছোট ভাই মির্জা গালিব সতেজ বলেন, আমার ভাবি আমাদের সম্পত্তির লোভে নিজের মাথার চুল নিজে কেটে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে আমরা নাকি উনাকে নির্যাতন করছি। গভীর রাতে ভাবি বাথরুমে ঢুকে চুল কেটে আমাদের সামনে আসে তখন আমার আব্বু বলছিল তুই চুল কাটলি কেন? তখন এশা বলেন, চুল কাটছি ভালো করছি।
নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মশিউর রহমান বাবু বলেন, এশার শরীরে তেমন কোনো নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, তবে চুল নিজে কেটেছে কিনা বলা যাচ্ছে না। তার বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি থাকতে পারে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্যাতনের বিবরণ দেওয়া যাবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *