করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রবিবার (২৮ মার্চ) স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর দলীয় কার্যালয়ে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নতুন করে কভিড-১৯ সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দিয়েছেন। 
 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করব, মাস্ক ছাড়া কেউ যাতে বাইরে না যায়, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে এবং প্রত্যেকটি সভা বা সিম্পোজিয়াম, সেমিনার বা প্রশিক্ষণ কর্মশালা সামাজিক দূরত্ব মেনে করতে হবে। যতদূর সম্ভব খোলা জায়গায় কর্মসূচি করতে হবে। ঘরের মধ্যে করলে করোনার প্রাদুর্ভাব আরো বেশি দেখা দেয়।’ এ সময় ভ্যাকসিন প্রদানও চলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশে একটি মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না তাঁর সরকার সবাইকে ঘর করে দেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। যেগুলো বাকি আছে সেগুলোও করে দেব, শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুত্ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে শতভাগ গৃহকে আমরা আলোকিত করব।’
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা—এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘যেহেতু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আবার দেখা গেছে এবং এই ভাইরাসটিও আবার ভিন্ন ভিন্নভাবে এসেছে, তাই আমাদের ঠিক আগের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। এই প্রাদুর্ভাব কত দিন থাকবে আমরা এখনো জানি না। এর জন্য আমাদের প্রস্তুতিটা থাকতে হবে।’
তিনি স্কুল-কলেজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা স্কুল-কলেজগুলো খুলে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন হঠাত্ করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় আমরা এখন নয়, রোজার ঈদের পরে স্কুল-কলেজ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেব।’ আর এই ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসবের মেরামত লাগবে, সেসব কাজ এরই মধ্যে তাঁর সরকার করে দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
‘পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের কাজগুলো চলতে থাকবে, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সে প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সব অনুষ্ঠান সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। পাশাপাশি গত বছর মানুষের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছেন, তেমনি সামনেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষ যেন কষ্টে না থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যা করার করব। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও মানুষের পাশে থাকতে হবে। যে দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। মানুষের জন্য খাদ্য বিতরণ, মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ ও নানা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক ভাষণ দেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জামান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির বত্তৃদ্ধতা করেন।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের শহীদসহ সব গণ-আন্দোলনে আত্মাহুতিদানকারীদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। সূত্র : বাসস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *