তৃতীয় লিঙ্গের ৫০ জনকে চাকরি দিল ‘পাঠাও ফুড’ |

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তৃতীয় লিঙ্গের ৫০ জনকে নিয়োগ দিয়েছে অ্যাপভিত্তিক ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ‘পাঠাও ফুড’। তাদেরকে ‘ডেলিভারিম্যান’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগ দেওয়ার আগে পাঠাও কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপেরও ব্যবস্থা করে। এছাড়া পাঠাও ও অ্যাপেক্স-এর সৌজন্যে উপহার হিসেবে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আইডি কার্ড, টিশার্ট, স্মার্ট ফোন, ফুড ব্যাগ ও বাইসাইকেল।
গত সোমবার (২৯ মার্চ) স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের ঐতিহাসিক মুহূর্তে রাজধানীর গুলশানে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কে পাঠাও এবং অ্যাপেক্স ‘স্বাধীনতা সবারই’ নামই এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে পাঠাও এ ঘোষণা দেয়।
পাঠাও জানায়, আমরা বিশ্বাস করি এই ৫০ জন ফুডম্যান তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা লিঙ্গ দ্বারা পরিচিত নয়। বরং তাদের পরিচয় প্রকাশ পাবে কাজে। তাদের একটাই পরিচয় তারাও এই দেশের নাগরিক। মানুষ হিসেবে তাদের প্রতি সমাজেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। পাঠাও-এর স্লোগান ‘মুভিং বাংলাদেশ’ শুধু কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। স্বাধীনতার চেতনা ও সমতায় তাদের রয়েছে পূর্ণ আস্থা। শুধু তৃতীয় লিঙ্গের নয়, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যেকোনো মানুষ যদি যোগ্য হয় পাঠাও তাদের কর্মসংস্থানে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে। আয়োজকদের বিশ্বাস চাকরির এই সুযোগ স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষে দেশকে কর্মঠ কিছু মানুষ উপহার দেবে। যারা ফুডম্যান হিসেবে সম্মানজনক আয়ের মাধ্যমে নিজেদের জীবনে আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)-এর মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, পাঠাও-এর প্রেসিডেন্ট ফাহিম আহমেদ, ডিরেক্টর মার্কেটিং ও পিআর সৈয়দা নাবিলা মাহবুব, ‘ট্রান্সএন্ড’ এর সিইও লামিয়া তানজীন তানহা, ট্রান্সজেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট শোভা সরকার ও মিতু প্রমুখ।
ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তর সিটি করপোরেশন ট্রান্সজেন্ডারদের পাশে ছিল, রয়েছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কাজের সংস্থানে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে। স্বাধীনতা সবারই। আজ যারা ফুডম্যান হিসেবে নিয়োগ পেলেন ভবিষ্যতে তারাই গাড়ি চালানোসহ আরও নানামুখী কাজে অংশ নেবেন।’
সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমরা পাচ্ছি অভিনন্দন ও প্রশংসা। কিন্তু এই অগ্রগতির সাথে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। আমি পাঠাওকে সাধুবাদ জানাই এমন একটি আয়োজন করার জন্য ও ৫০ জন ট্রান্সজেন্ডার আয়ের সুব্যবস্থা করার জন্য। আপনাদের সঙ্গেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
পাঠাও প্রেসিডেন্ট ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘আমি মনে করি দেশের পঞ্চাশতম স্বাধীনতা উদযাপনের সঠিক উপায়, দেশের নাগরিকদের জন্য কিছু করা ও দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখতে সচেষ্ট হওয়া। এই ইতিবাচক পরিবর্তন এর সঙ্গী হিসেবে আমাদের মতাদর্শের সাথে যায় এমন কিছু করার সুযোগ পেয়ে আমরা আনন্দিত। আমরা এগিয়ে গেলেই, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
এপেক্স ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘ক্ষমতায়ন হচ্ছে এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র। একটি সমাজ তখনই সমৃদ্ধ হতে পারে যখন প্রত্যেক ব্যক্তি-বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে- স্বীকৃত এবং ক্ষমতায়িত হতে পারে। চলুন দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাই এবং মানুষকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে শিখি। আমরা সবাই মানুষ, সবারই একটা গল্প আছে, আর প্রত্যেকের গল্পই গুরুত্বপূর্ণ। আত্মার কোনও লিঙ্গ হয় না । প্রকৃত সাহস হচ্ছে অন্যকে অনুকরণ না করে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখা এবং তা কাজের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা।’


Source: Kalerkantho.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *