খালেদা জিয়া সব দিক দিয়ে স্থিতিশীল আছেন : চিকিৎসক

ঢাকা, ১৭ এপ্রিল – করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সব দিক দিয়েই স্থিতিশীল আছে বলে তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আজ শনিবার রাতে চার সদস্যের একটি চিকিৎসক দল খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় যান। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ শেষে চিকিৎসক দলের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

‘খালেদা জিয়া মানসিকভাবে খুব স্ট্রং আছেন’ জানিয়ে এ সময় চিকিৎসক বলেন, ‘খালেদা জিয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন। তাঁর পালস, ব্লাড প্রেসারও ভালো আছে। গতকাল পর্যন্ত উনার জ্বর হয়েছিল একটু একটু, আজ সেই টেম্পারেচার কমে এসেছে। আজ সারাদিন উনার জ্বর আসেনি। সন্ধ্যায় একটু এসেছে।’

‘খালেদা জিয়াকে আপাতত এখন হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে প্রয়োজন হলে আমরা তাৎক্ষণিক উনাকে স্থানান্তর করতে পারব। সেই প্রস্তুতি আমাদের আছে। সব কিছু মিলিয়ে উনি ভালো আছেন।’

বিগত এক বছরে করোনার চিকিৎসায় নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে আজ নবম দিন। আমরা এখন করোনার কঠিন সময় পার করছি। এ সপ্তাহটা না যাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। আমরা এতদিন উনাকে যেভাবে ক্লোজ মনিটর করে যাচ্ছি, সেটা বাকি সময়ও চলমান থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার শারীরিক বিষয়টিকে ঢিলেঢালাভাব নিচ্ছি না। আমরা খুব প্রফেশনালি কাজ করছি।’

আরও পড়ুন : হেফাজতে ইসলাম বিএনপি-জামায়াতের ‘বি’ টিম : হানিফ

খালেদা জিয়ার ফুসফুসের সিটি স্ক্যানের চূড়ান্ত রিপোর্টে ‘ন্যূনতম মাত্রায় সংক্রমণ’ আছে জানিয়ে অভিজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, ‘এটার কোনো পার্সেন্টিজ বলতে চাই না। মেডিকেলের ভাষায় বলব, এটা খুবই সামান্য। এই সময়ে আমি ও আমরা শত শত রোগী দেখেছি। রোগী কিছু বোঝার আগেই সংক্রমণ হয়ে যায়। উনার শরীর সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। খুব মিনিমাম সংক্রমণ আছে।’

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়াকে অক্সিজেন নিতে হচ্ছে না। তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো। করোনার রোগীদের দ্বিতীয় সপ্তাহ সব সময় নজরে রাখতে হয়। সেদিকে আমরা সার্বিক খেয়াল রাখছি।’

এ সময় চিকিৎসক আরও জানান, এক বছর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বাসায় ফেরার সময় খালেদা জিয়ার মারাত্মক ক্ষুধামন্দা ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘তখন এক মাসে উনার ব্লাড সুগার একের ঘরে নিয়ে এসেছিলাম। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, করোনা রোগী ভালো হয়ে, ডিসচার্জ হয়ে বাসায় গিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আমরা সবদিকে নজর রাখছি।’

সবশেষে ডা. এফ এম সিদ্দিকী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে বলেন, ‘উনি বলেছেন, মাস্ক সবার ঠিকভাবে পরা উচিত। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।’

গত রোববার বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। তখন থেকে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। তাঁর বাসার আরও কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের দেখভাল করছেন ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।

গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র : এনটিভি
অভি/ ১৭ এপ্রিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *