করোনার মধ্যে ডায়রিয়ার প্রকোপ |

গোপালগঞ্জের নদী ও খালের পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি ও প্রচন্ড গরমের কারণে জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। এসব রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনেকটা হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বিছানা সংকুলন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাদেরকে হাসপাতালের মেঝে, বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীরা বেশীর ভাগই গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে প্রায় দুইশতাধিক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। আজ রবিবার বিকেল পর্যন্ত ৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। ১২ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর রয়েছে ৩৭ জন। অধিক রোগী আসার কারণে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া রোগে ব্যবহৃত ওষুধ ও কলেরা স্যালাইন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ কম থাকায় বাধ্য হয়ে রোগী ও রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনছেন।

রবিবার দুপুরে সরেজমিন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১২টি বেড থাকলেও রোগী রয়েছে ৩৭জন। এ হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে প্রায় দুইশজন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া বর্হির বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে আরো প্রায় দেড়শ জন। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ হাসপাতালে বেডের অপ্রতুলতার কারণে বাধ্য হয়ে রোগীরা মেঝেতে অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া জেলার কোটালীপাড়া, টুঙ্গিপাড়া, মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি শুরু হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের আলমগীর মোল্লা বলেন, গত রবিবার রাতে আমার ছেলের হঠাৎ করে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তাকে প্রথমে বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কোনো পরিবর্তন না দেখে রাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখি কোনো সিট নেই। রোগের কারণে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। কিন্তু ডায়রিয়া ওয়ার্ডের যে নোংরা পরিবেশ তাতে রোগী সুস্থ হওয়ার চেয়ে অসুস্থ আরো বেশী হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল থেকে শুধু মুখে খাওয়া স্যালাইন দিচ্ছে। বাকি সব ওষুধ ও স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।

ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর বাড়ির লোক গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের সোহেলী বেগম, তালা গ্রামের মো. জোবায়ের, মানিকদাহ গ্রামের শাহিনুর বেগমসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, মধুমতি নদীর পানি লবনাক্ত। প্রতিবছর এই সময়টাতে নদীতে লবন পানি আসে। আমরা নদীপাড়ের মানুষ সভাবতই এই নদীর পানি দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন কাজ সারতে হয়। এরপর আবার প্রচন্ড গরম শুরু হয়েছে। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় গ্রামে ডায়রিয়ার প্রার্দুভাবক দেখা দিয়েছে।

গোপালগঞ্জ ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার অসিত কুমার মল্লিক জানান, প্রতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে ডায়রিয়া জনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এসময় প্রচন্ড গরম ও গোপালগঞ্জের নদীতে লবনপানি চলে আসে। নদী তীরবর্তি বা গোপালগঞ্জ শহরের মানুষই বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি আরো জানান, ডায়রিয়া রোগীদের জন্য মুখে খাওয়া স্যালাইন পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে কলেরা স্যালাইনের সরবরাহ একটু কম থাকায় পর্যাপ্ত দিতে পারছি না। এছাড়া বেডের স্বল্পতা থাকায় সবাইকে বেড দিতে পারছি না।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *