শংকু রানী : কলেজের প্রভাষক হয়েও অপরাধ জগতের রানি

সিলেট, ২২ এপ্রিল – পেশায় কলেজের প্রভাষক। কিন্তু ছাড়তে পারেননি লোভ আর ধান্দার পথ। আইনি সহায়তা প্রদানের কথা বলে একের পর এক প্রতারণা করে নিরীহ ও সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়াই যেন তার নেশা।

শংকু রানী সরকার লিলি। সিলেটের বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের প্রভাষক তিনি। তার পেশা মহান শিক্ষকতা হলেও তিনি ছাড়তে পারেননি ধান্দা ও অসৎ পথ। প্রতারণার অভিযোগে এর আগে জেলও খেটেছেন লিলি। তবু ফিরে আসেননি সৎ পথে। বিবাহিত জীবনে দুই সন্তানের জননী লিলি। তবে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা নেই। দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন সিলেট শহরতলির মেজরটিলার এন আর টাওয়ারে ৩৫/২ নং বাসায়। সেখানে থেকেই লিলি বিস্তার করে চলেছেন তার প্রতারণা ও ধান্দার জাল।

তবে আরেকবার (বুধবার- ২১ এপ্রিল) ধরা খেতে হয়েছে সিলেটের আদালতপাড়ায়। এক গৃহকর্মীর কাছ থেকে তার ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ লাখ টাকা। লিলি ছিলেন ট্যাক্স বারের সদস্য বা কর পেশাজীবী ( ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাক্টিশনার- আইটিপি)। কিন্তু নানা অপরাধে ট্যাক্স বারের সদস্য পদ থেকে লিলিকে ২০১৩ সালে বহিষ্কার করা হয়। তারপরও তিনি নিজেকে আয়কর আইনজীবী পরিচয় দিয়ে মানুষকে আইনি সহায়তা দেয়ার নামে হাতিয়ে নিতে থাকেন টাকা-পয়সা।

ঠিক এভাবে এক মাস আগে সিলেটের মিরাবাজারের গৃহকর্মী শিল্পী বেগমের ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া প্রাইভেটকার চালক মিরাজকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে চুক্তি মোতাবেক ধাপে ধাপে ৪৫ হাজার টাকা নেন। কিন্তু লিলি মামলার শুনানির তারিখগুলো নানা টালবাহানায় পার করতে থাকেন।

আরও পড়ুন : প্রতারণার মামলায় রিমান্ডে মডেল রোমানা স্বর্ণা

বুধবার (২১ এপ্রিল) ছিলো শিল্পী বেগমের ছেলের মামলার আরেকটি শুনানির তারিখ। বুধবার তার ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা চূড়ান্ত করেন প্রতারক লিলি। কিন্তু বুধবারও ছেলের জামিন না হওয়ায় সিলেট বার হল নং-২ এর সামনে লিলির কাছে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত চান শিল্পী বেগম। এতে লিলি ক্ষিপ্ত হয়ে শিল্পী বেগমকে মারধর শুরু করেন। এসময় ঘটনাস্থলে আইনজীবী ও লোকজন জড়ো হলে শিল্পী বেগম বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন। তখন আইনজীবী ও জনতা প্রতারক লিলিকে আটক করেন।

আটকের পর লিলি উত্তেজিত হয়ে নিজেকে একাধারে আয়কর আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্বনাথ কলেজের প্রভাষক হিসেবে পরিচয় দেন। এসময় তার গলায় ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউমেন রাইটস’ মানবাধিকার সংস্থার একটি পরিচয়পত্র ঝুলতে দেখা যায়। এটি সবাইকে দেখিয়ে লিলি নিজেকে ওই সংস্থা সম্পাদিত পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দেন। এছাড়াও তিনি বেসামাল হয়ে এসময় বলেন, ‘বাঁশ দিবো। আমি ক্রাইম রিপোর্টার। সব সাংবাদিকদের বাঁশ দিবো। একটা নয়, ৯ টা, ৬ টা বাঁশ দিবো।’ পরে তাকে পুলিশের ভয় দেখালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের ভুল শিকার করেন এবং ওই ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর টাকা ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে ২৫ হাজার একটি চেক দিয়ে মুক্তি পান।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজর রহমান বলেন, লিলি কোনো আইনজীবী না। তিনি এর আগে ছিলেন একজন আয়কর পেশাজীবী। ২০১৩ সালে থাকে তাকে ট্যাক্স বারের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে ২০১৯ সালে তিনি একটি প্রতারণার দায়ে কারাবাসও করেছেন। এছাড়াও তিনি আরও একাধিকবার এভাবে প্রতারণা করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা খেয়েছেন। কিন্তু লিলি শুধরাননি।

তবে নিজের উপর অর্পিত সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করলেন শংকু রানী সরকার লিলি। তিনি বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, আমি আয়কর আইনজীবী ছিলাম। আমার প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ ষড়যন্ত্র করে আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি একজন কলেজের শিক্ষিকা। সাংবাদিকতাও করি। মানবাধিকারকর্মীও।

শিল্পী বেগমের কাছ থেকে তার ছেলের জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, তবে আমি ৪৫ হাজার টাকা নেইনি। ২৫ হাজার টাকা নিয়েছি। ৪৫ হাজার টাকা নেয়ার কথা মিথ্যা। তবে এই ২৫ হাজার টাকা মামলার পেছনে খরচ হয়ে গেছে। আমি পরিমল বাবু নামের এক আইনজীবীকে শিল্পী বেগমের ছেলের মামলায় নির্ধারিত করেছি। ছেলের জামিন হলে আমাকে আরও ২০ হাজার টাকা দেয়ার কথা। এরই মধ্যে আজ (বুধবার) তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে এবং আমাকে চিটার-বাটপার বলেছে।

তবে শিল্পী বেগমের স্বামী পারভেজ মিয়া বলেন- আমরা ৪৫ হাজার টাকাই দিয়েছি। তবে সব টাকা শংকু রানীর হাতে দেয়নি। কিছু টাকা দুলাল নামে যে ব্যক্তি লিলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তার হাতেও দিয়েছি।

এদিকে, শংকু রানী সরকার লিলি বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক- বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাপসী চক্রবর্তী বলেন, শংকু রানী এ কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের প্রভাষক। তবে তার ব্যক্তিগত কার্যক্রম বা এসব অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানি না।

সূত্র: সিলেটভিউ
এন এ/ ২২ এপ্রিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *