মুসলিমদের সঙ্গে রমজান উদযাপন করেন গাজা উপত্যকার খ্রিস্টানরা |

জেরুজালেমের গাজা উপত্যকায় রমজান মাসে খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে অভিন্ন সংস্কৃতি বিরাজ করে। স্থানীয় খ্রিস্টানরাও এই পবিত্র মাসে মুসলিমদের মতো রমজানের সংস্কৃতি পালন করেন। গাজা অঞ্চলের খ্রিস্টানরা ফিলিস্তিনের গণমানুষের অবিচ্ছিদ্য অংশ বলে মনে করেন সুপ্রিম প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটি ফর চার্চ অ্যাফেয়ার্সের সেক্রেটারি সানা তারাজি। 

চার্চের পরিসংখ্যান মতে, গাজা উপত্যাকায় ৩৯০টি খ্রিস্টান পরিবার বসবাস করে। যাদের মধ্যে এক হাজার ৩১৩ জন সদস্য আছে। অপরদিকে এ অঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ মুসলিম বসবাস করেন। 

চার্চ পরিচালনা পরিষদের সদস্য তাজারি আরো জানান, ‘উভয় সম্প্রদায় ঘনিষ্ঠভাবে বসবাস করায় কেউ মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে তফাত করতে পারবে না। তাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন বিরাজমান।’

শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তাজারি বলেন, আমার জন্য শৈশবের সুন্দর স্মৃতিবাহী একটি মাস হলো রমজান। এ সময় আমি ও আমার পড়শী বন্ধু মিলে ফানুস ও আতশবাজি দিয়ে রাস্তায় অনেক বেশি খেলতাম। রাতের অন্ধকারকে ফানুস আলোকিত করে তুলত। 

তাজারি আরো জানান, রমজান মাসে আমাদের খাবার রীতিতে বিশাল পরিবর্তন হয়। অধিকাংশ সময় দুপুরের খাবার বিলম্ব করে মাগরিবের নামাজের সময় আহার করি। তাছাড়া পরিবারের খাবারও বিলম্ব করে তৈরি করি, যাতে করে খাবারের ঘ্রাণে রোজাদার মুসলিম প্রতিবেশীদের কষ্ট না হয়। 

রমজানের রান্না সম্পর্কে তাজারি বলেন, গাজায় প্রচলিত রীতি অনুসরণ করে রমজান মাসের প্রথম দিন আমরা ঐতিহ্যবাহী ‘মুলুখিয়া’ খাবার রান্না করি। এর পেছনে সুন্দর অন্তরে সুন্দর একটি বছরের প্রত্যাশা থাকে।

রমজানে মুসলিম বন্ধুরা আমাকে ইফতারের দাওয়াত দেন। অভিন্ন অনুভূতি নিয়ে আমরা একসঙ্গে ইফতার করতে আমিও তাদের মতো সারাবেলা রোজা রাখি। বিষয়টি তাদের আগেই জানাই। পুরো দিন মনে হয়েছিল, সন্ধাবেলা তাদের কাছে সব খাবার খাব। কিন্তু ইফতারে সময় সামান্য কয়েক লোকমা খেয়ে আর খেতে পারিনি। 

তাজারির স্বামী ও আরব অর্থডোক্স স্কাউটসের প্রধান মাজেদ রমজানে মুসলিমদের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা জানান। বন্ধুদের সঙ্গে রমজানের রাত উদযাপন তাঁর কাছে অন্যরকম এক অনুভূতি তৈরি করে। কিন্তু করোনা মহামারিকালে মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে রমজান উদযাপনকে গভীরভাবে অনুভব করেন তিনি। 

রমজান মাসে গাজা উপত্যাকার রাস্তায় অর্থোডক্স স্কাউটসের পক্ষ থেকে ইফতারের আগ মুহূর্তে ঘরফেরা মানুষের মধ্যে খেজুর ও পানীয় বিরতণ করা হয়। তাছাড়া গাজার গ্রিক অর্থোডক্স চার্চে ইফতারের আয়োজন করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ধারাবাহিক দুই রমজান যাবত তা স্থগিত আছে। 

মাজেদ বলেন, চার্চ প্রাঙ্গণে ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে গাজায় বসবাসরত মুসলিমদের প্রতি আমরা গভীর ভালোবাসা ও সংহতি প্রকাশ করি। প্রাচীন চার্চ অবস্থিত ১৪ শতাব্দির পুরোনো ঐতিহাসিক কাতেব ওলাইয়া মসজিদের কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, প্রতিবেশীকে ভালোবাসা ও নিজ ভূমির অংশীদারের মাধ্যমে এটি আমাদের সম্পর্কের প্রতীক।

মাজেদ আরো জানান, ‘মুসলিম ভাইরা যেমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমাদের অভিনন্দন জানায় এবং আমাদের সঙ্গে তাদের আনন্দ ও দুঃখ ভাগ করে নেয়, তেমনি আমরা তাদের সঙ্গে সম্প্রীতি ও ভালবাসা বিনিময় করি এবং তাদের আচার-অনুষ্ঠানের পবিত্রতার কথা স্বীকার করি।’ 

সূত্র : আরব নিউজ 


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *