শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর বাতিলের চেষ্টা নয়, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ নামে সরকারিভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানও বানচালের পরিকল্পনা করেছিলেন মামুনুল হক। হেফাজতের সদ্যঃসাবেক এই যুগ্ম মহাসচিব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে কথিত আন্দোলনের নামে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। সরকারবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ছক ছিল তাঁর। এসব তথ্য পেয়ে মামুনুল হকের সঙ্গে কারা, কী ধরনের পরিকল্পনা করেছে তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে অনুদানের টাকা এনে নাশকতায় ব্যবহারের ব্যাপারে আর্থিক অনুসন্ধানও শুরু হয়েছে।
এদিকে মোহাম্মদপুর থানায় হামলা ও চুরির মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত নাশকতার দুই মামলায় মামুনুলের আরো সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। অন্যদিকে তিন মামলায় আরেক যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিবের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে থাকা ‘শিশু বক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানী ধর্মীয় পোশাকের আড়ালে প্যান্ট-শার্ট পরে মডার্ন চলাফেরা করতেন বলেও তথ্য পেয়েছে পুলিশ। রফিকুলকে তেজগাঁও থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় মতিঝিল থানার মামলা এবং চলতি বছরের ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামুনুলের ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। একই মামলায় হাবিব ও কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদের রিমান্ড আবেদন করা হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালত হাবিব ও মামুনুলের সাত দিন রিমান্ডের আদেশ দেন। জালাল উদ্দিন আহমেদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গতকাল পল্টন থানায় আরেকটি মামলায় জুনায়েদ আল হাবিবের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ডিবির সূত্র জানায়, মামুনুলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কর্মকাণ্ড এবং জামায়াত কানেকশন পাওয়া গেছে। এ কারণে নাশকতায় তাঁর উদ্দেশ্য এবং এর পেছনে কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামুনুল ভারতবিরোধী মতাদর্শীর লোকজন এবং সরকারবিরোধী দলের লোকজনকে একসঙ্গে করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান বানচাল করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। এ জন্য ভারতে মুসলমানদের নির্যাতনে মোদি জড়িত বলে ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসেন। এই ইস্যুতে সাড়া দেশে তিনি কিছু রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ‘বড় মুভমেন্ট’ করার পরিকল্পনা করেন। ২০১৩ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকারের পতন ঘটিয়ে অন্য দল ক্ষমতায় আসতে পারবে বলে ধারণা ছিল তাঁদের। ওই সময় হেফাজতের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে মামুনুল হককে ছাড়া কোনো কিছু হবে না বলে বিশ্বাস ছিল তাঁর। এ কারণে কৌশলে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে বিরোধিতা শুরু করেন। পরে মোদিবিরোধী স্লোগান তোলেন। মামুনুলের নাশকতার পরিকল্পনার পাশাপাশি তাঁর আর্থিক দুর্নীতির ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। তাঁর নাশকতায় ব্যবহৃত টাকা কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় গেছে তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর ব্যাংক ও বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলাম মাদানীর প্যান্ট-শার্ট পরে চলাফেরা, ধূমপান, পর্ন ভিডিও দেখাসহ অন্য এক ধরনের জীবনযাপনের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল দাবি করেছেন, রাস্তায় তিনি ভিন্নভাবে চললেও মানুষ তাঁকে চিনতে পারত না। সরকারবিরোধী কড়া বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসে বড় নেতা হওয়া ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
Source: kalerkantho