ভালুকায় ভারী যানবাহনের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতু |

ময়মনসিংহের ভালুকায় ভারী যানবাহনের চাপে স্ল্যাব ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের আওতাধীন ওই ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। বর্তমানে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যে সেতুটির দুই পাশে আড়াআড়িভাবে বাঁশ বেঁধে বন্ধ রাখা হয়েছে যানচলাচল। সেতুটির অবস্থান উপজেলার সিডস্টোর-সখীপুর সড়কের লাউতি খালের ওপর। এটি পুনর্নির্মানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ভালুকা উপজেলার মাঝে সিডস্টোর-সখীপুর সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও সদাব্যস্ত। আর সড়কটির জন্যেই লাউতি খালের ওপর সেতুটির গুরুত্বও যথেষ্ট। বেশ কয়েক বছরে এই সেতুর পশ্চিম অংশে সিডস্টোর-সখিপুর সড়কের আশেপাশে গড়ে উঠছে বেশ কিছু শিল্প কারখানা এবং কিছু কারখানা নির্মাণাধীন। প্রতিদিন বিভিন্ন কল-কারখানার হাজার হাজার শ্রমিকবাহী গাড়ি, ছোট-বড় শত শত হালকা, মাঝারি ও কারখানার মালবাহী ভারী যানবাহনের দিবারাত্র যাতায়াত এই সেতুটির ওপর দিয়ে। 
১৯৮২ সালে জেলা পরিষদের মাধ্যমে উপজেলার লাউতি নদীর ওপর নির্মিত ওই সেতুটি দিয়ে অহরহই যাতায়ত করে ধারণ ক্ষমতার বাইরের ওজনের মালবাহী যানবাহ। ফলে অতিরিক্ত ওজনের চাপ সইতে না পারায় সেতুটির স্ল্যাবের মাঝখানের কিছু অংশ থেকে ঢালাই খসে পড়ে রড বের হয়ে আসে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটিতে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের পক্ষ থেকে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্টিল ব্রিজের পাত বসানো হয়। তখন থেকে এর ওপর দিয়ে হালকা যান ও পথচারীদের চলাচল শুরু করেন। তবে সেতুর দুই পাশে ‘ক্ষতিগ্রস্ত সেতু যান চলাচল নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড ও হাইটবার টানিয়ে কভার্ডভ্যানসহ ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ করা হয়। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে চালকরা সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল অব্যাহত রাখেন। ফলে, সম্প্রতি সেতুটি আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

এদিকে, স্থানীয় সাংসদ কাজিম আহাম্মেদ ধনু গত রবিবার (২৫ এপ্রিল) সেতুটি পরিদর্শন করেন এবং দ্রুত পুনর্নির্মাণের জন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা প্রকৌশলী মো, রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহাম্মেদ বাচ্চু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়দের দাবি, মাত্রাতিরিক্ত ওজনের ট্রাক ও লরি চলাচলের কারণেই সেতুটির একটি অংশ ভেঙে গেছে। এরপর দুই বছর আগে হালকা যানচলাচল উপযোগী করে ঝুঁকিপূর্ণ ওই সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ করা হলেও কেউ তা শোনেনি। এখন যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পরার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিমত, ভারী যানবাহনের চাপে সেতুটি ভেঙে পড়লে পার্শ্ববর্তী সখীপুরসহ উপজেলার একাংশের সাথে ভালুকা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। নতুন করে সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা। 

হবিরবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, সেতুটি ১৯৮২ সালে আমার সময়ে নির্মাণ করা হয়। তার দাবি, অতিরিক্ত মালবাহী যান চলাচলের কারণে সেতুটি ভেঙে পড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সেতুটি জনস্বার্থে দ্রুত পুনর্নির্মাণ দরকার।

ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহাম্মেদ বাচ্চু জানান, দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যে আড়াআড়ি বাঁশ বেঁধে গত রবিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে সেতুটির ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম কে জানান, আগামী এক সপ্তাহের মাঝে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করে সেতুটি হালকা যানচলাচলের উপযোগী করা হবে। তাছাড়া, ওই সেতুটির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেক আগেই জানানো হয়েছে এবং ইতোমধ্যে সেতুটির সার্ভে ও সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে সেতুটির ডিজাইনের কাজ চলছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। 

স্থানীয় সাংসদ কাজিম আহাম্মেদ ধনু কে বলেন, সেতুটির বিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মাঝে এটা করে দেওয়া হবে বলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *