মহানবী (সা.) রমজান মাসে বেশি বেশি দান করতেন

রমজান মাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত নেআমত নিয়ে আসে। এ মাসে অসংখ্য মানুষের পাপ মোচন করা হয়। অভাবী মানুষকে সহায়তা করা এ মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসুল (সা.) রমজান মাস এলে প্রবাহমান বাতাসের চেয়েও বেশি দান করতেন।

রমজানে অত্যাধিক দান : রমজান মাসে মহানবী (সা.) অত্যাধিক দান করতেন। তাই সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহিনও বেশি বেশি দান করতেন। প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি আরো বেশি দান করতেন। জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁকে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে যখন জিবরাইল (আ.) দেখা করতেন, তখন তিনি মানুষের কল্যাণে প্রবাহমান বাতাসের চেয়েও বেশি দান করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩২২০)

দানের পরিপূর্ণ সওয়াব : দানের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনেক বড় সুযোগ মেলে। মহান আল্লাহ দানের পরিপূর্ণ প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আমার রব বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাঁর রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাঁর রিজিক সীমিত করেন, তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি এর প্রতিদান দেবেন, তিনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ৩৯)

দানের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন : দান করলে সম্পদ বাহ্যিকভাবে কমতে দেখা গেলেও বাস্তবে তা আরো বাড়তে থাকে। তাছাড়া সম্পদ দানের মাধ্যমে মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে আল্লাহভীরুকে। যে নিজের সম্পদা দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য। তাঁর প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদানে (সে তা দান করছে) না। বরং শুধুমাত্র মহান রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশা করে। এবং তিনি তো অচিরেই সন্তোষ হবেন।’ (সুরা লাইল, আয়াত : ১৭-২১)

গোপন দান রবের ক্রোধ দমন করে : উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ভালো কাজ মন্দ কাজ থেকে সুরক্ষা দেয়। গোপন সদকা মহান রবের ক্রোধকে দমন করে। আত্মীয়তার সম্পর্ক জীবন বাড়ায়। সব ভালো কাজ সদকাতুল্য। দুনিয়ার সৎকর্মীশীলরা আখেরাতেও সৎকর্মশীল বলে গণ্য হবেন। দুনিয়ায় মন্দ কাজকারী আখেরাতেও মন্দকারী বলে গণ্য হবে।’ (তাবারানি, হাদিস নং : ৬০৮৬)

রিজিকে বরকত লাভ : দানের মাধ্যমে রিজিকে বরকত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯-৩০)

রমজানে জাকাত আদায় : জাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। রমজান মাসে জাকাত আদায় করা যায়। এ মাসে জাকাত আদায় করে বহু গুণ সওয়াব লাভ করা সম্ভব। অগণিত সওয়াব লাভের আশায় অনেক মানুষ এ মাসেই জাকাত প্রদান করে থাকেন। জাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়। পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উপায়।

তাই যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তাঁরা রমজান মাসে যথাযথ হিসাব কষে জাকাত আদায় করতে পারেন। এর মাধ্যমে যেমন বহুগুণ সওয়া পাওয়া সম্ভব, তেমনি করোকালে অর্থকষ্টে থাকা মানুষের সহায়তায় পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ মেলে। মহান আল্লাহ আমাদের যথাযথ আমলে তাওফিক দিন।

এন এইচ, ০২ মে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *