স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব

ঢাকা, ০৭ মে – করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপির জন্য যে খাতওয়ারি প্রস্তাব তৈরি করেছে, তাতে স্বাস্থ্যখাতে প্রায় ১৭ হাজার ৩০২ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৩২ কোটি টাকা। পরে সংশোধনে তা বেড়ে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকা করা হয়।

চলতি মাসের শেষ দিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) সভায় এডিপি চূড়ান্ত হবে বলে পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ।

প্রতিবারের মত টাকার অংকে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়লেও প্রস্তাবিত এডিপিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দের দিক দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান হবে পঞ্চম।

আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপির যে প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ হবে তার ৭.৭%।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতের বরাদ্দের পরিমাণ মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছিল।

প্রতিবছরের মত এবারও সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার এই বরাদ্দ হবে মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিক্ষা খাত।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান খন্দকার আহসান হোসেন বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের জন্য কত এবং কোন খাতে কত বরাদ্দ দেওয়া হবে তা অর্থ বিভাগ আমাদের ঠিক করে দিয়েছে। এখন সেই বরাদ্দগুলো চলমান প্রকল্প ও সম্ভাব্য অনুমোদনযোগ্য প্রকল্পগুলোতে ভাগ করে দিচ্ছি।”

এদিকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের ১৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকার মধ্যে ৪৯৯১ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলো। ব্যয়ের পরিমাণ বরাদ্দের মাত্র ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, গত বছর দেশে কোভিড-১৯ মাহামারী দেখা দিলে স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ করে চিকিৎসা সরঞ্জামে অপ্রতুলতা চিহ্নিত করে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল।

“কিন্তু সারাবছর কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ক্রয় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে এই খাতের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে যেসব সভা সেমিনার করার কথা ছিল তাও আমরা ঠিকমতো করতে পারিনি। এই কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম দিকে অর্থব্যয় করতে পারিনি।“

তবে চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তব অগ্রগতি আরও বেশি হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “অর্থবছর শেষে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও অনেক উন্নতি দেখা যাবে।”

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এ খাতের উন্নয়নে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশি বরাদ্দ চেয়েছেন তারা।

“সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে এই খাতের বিশেষ উন্নয়নে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব।”

আসন্ন অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য একদিকে যেমন বরাদ্দ বাড়াতে হবে, তেমনি সেই বরাদ্দ বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ লোকবল তৈরি ও বাস্তবায়ন বৃদ্ধি কীভাবে করা যায়- সেই নীতি গ্রহণ করতে হবে।“

ক্রয় কার্যক্রমে ‘অদক্ষতা ও সিন্ডিকেট’ এ খাতের ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দক্ষ লোক বসে থাকলেও সমস্যার সমাধান নাও হতে পরে, কারণ এখানে একটি বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের সাথে আতাঁত না করতে পারলে এখন কাজ করা যাচ্ছে না।”

দক্ষ লোকবল তৈরির মাধ্যমে প্রকল্প তৈরি এবং বাস্তবায়নের জন্য ক্রয় কার্যক্রম স্বচ্ছতার নীতি গ্রহণ করে বরাদ্দ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

খাতওয়ারী বরাদ্দ

চলতি অর্থবছর পর্যন্ত দেশের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ১৭টি খাতে ভাগ করে বরাদ্দ দেওয়া হত। এবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তা ১৫টিতে নামিয়ে এনে খাতভিত্তিক বরাদ্দে প্রস্তাব তৈরি করেছে।

মহামারীকালে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি নিতে যাচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। পরে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কমিয়ে এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকায় সংশোধন করা হয়।

খাতওয়ারী বরাদ্দের প্রস্তাব (সর্বোচ্চ বরাদ্দের ক্রমে)

>> পরিবহন ও যোগাযোগ: ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ২৭.৪৭%

>> বিদ্যুৎ ও জ্বালানি: প্রায় ৪৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ২০.৪৫%

>> গৃহায়ণ গণপূর্ত: ২৩ হাজার ৮২১ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ১০.৬২%

>> শিক্ষা: ২৩ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা; মোট বরাদ্দের ১০.৪০%

>> স্বাস্থ্য: প্রায় ১৭ হাজার ৩০২ কোটি টাকা, মোট বরাদ্দের ৭.৭১%

>> স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন: ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা; ৬.৩৬%

>> পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ: ৮ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা; ৩.৭৮%

>> কৃষি: প্রায় ৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা; ৩.৪১%

>> শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক সেবা: ৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা; ২.০৭%

>> বিজ্ঞান ও আইটি: প্রায় ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা; ১.৬০% শতাংশ।

>> গণ আদেশ ও নিরাপত্তা: প্রায় ৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা; ১.৪৩%।

>> সাধারণ গণ সেবা: ২ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা; ১.৩০%।

>> বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম: প্রায় ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা; ০. ৯৮%।

>> সামাজিক নিরাপত্তা: ১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা; ০.৭৩%

>> প্রতিরক্ষা: ৮৫০ কোটি টাকা; ০.৩৮%।

>> এছাড়া বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বা ১.৩১%।

সূত্র : বিডিনিউজ
এন এইচ, ০৭ মে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *