আমের জন্য অপেক্ষা |

গোপীবাগ বাজারে ভ্যানে করে আম নিয়ে বসেছেন আহমেদ আলী। জানতে চাইলে জাতের নাম বলেন সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ। দামও কিছুটা বেশি বলেন। দোকানের পাশে মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে অন্তত ১০ জনকে দেখা গেল, আম দেখে কয়েক সেকেন্ড নেড়েচেড়েই চলে গেলেন। এমন একজন স্থানীয় বাসিন্দা সগির আহমেদ। জানতে চাইলে বলেন, ‘এখনো জ্যৈষ্ঠ মাস শুরু হয়নি, পরিপক্ব আম কী করে আসে। আমার মনে হচ্ছে, কোনো কিছু দিয়ে পাকানো হয়েছে। তাই কেনার সাহস পেলাম না।’ বিক্রেতা অবশ্য পাইকারি বাজারে দেদার বিক্রির কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ঘাটে (পাইকারি বাজার) ভূরি ভূরি আম আসতেছে। এত আম কৃত্তিমভাবে পাকাইব ক্যামনে।’

গোপীবাগের মতো মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, গুলশানসহ রাজধানীর প্রতিটি বাজারেই এখন পাওয়া যাচ্ছে পাকা আম। গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ কয়েক জাতের আম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমের অর্ডার নিচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন বিক্রেতারাও। কোথাও কোথাও হিমসাগর নামেও আম বিক্রি হচ্ছে। স্থায়ী দোকানগুলোতে কিছু ভালো ও দৃষ্টিনন্দন আমের দেখা পাওয়া গেলেও ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ আমের কোথাও না কোথাও পচা দেখা গেল। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সব ফলই প্রথম নামলে নতুন হিসেবে মানুষ আগ্রহ করে কেনে। দামও ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু আমের বিক্রি সেই হিসেবে খুবই কম। অনেকে নেড়েচেড়ে দেখে, কিন্তু কেনে না। এতে অনেকেরই লোকসান গুনতে হচ্ছে।

আম গবেষণা কেন্দ্র বলছে, সময়মতো এবার বৃষ্টি না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের আমের জন্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মে মাসের শেষ নাগাদ কিছু আম আসতে পারে। তবে আমের মৌসুম শুরু হতে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হরিদাস চন্দ্র মহন্ত কে বলেন, ‘অক্টোবর  থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এবার সাত মাস খরা ছিল। প্রথম বৃষ্টি হয় ৩ মে। এই অনাবৃষ্টির কারণে এবার আম পরিপুষ্ট হতে সময় বেশি লাগবে। ফলে এবার আম নামানোর সময় পিছিয়ে যাবে। জুনের প্রথম সপ্তাহের আগে এ অঞ্চলের পরিপুষ্ট আম নামানো সম্ভব নয়।’

তাঁর দেওয়া তথ্য মতে প্রথমে গোপালভোগ, তারপর মহান্দা, গোবিন্দভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ক্ষীরসাপাত, ফজলি, আশ্বিনা ইত্যাদি আম পর্যায়ক্রমে বাজারে আসবে। প্রতিটি জাতের আম বাজারে আসতে মাঝখানে ১০ থেকে ১৫ দিন ব্যবধান হবে।

এখন বাজারে বিক্রি হওয়া আমের মান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার আম কিছুটা আগে আসে এটা ঠিক। তাই বলে এত আগে নামানোটা সন্দেহের বিষয়। অনেকে বেশি দাম পাওয়ার আশায় পরিপক্ব হওয়ার আগে কিংবা মোটামুটি পরিপক্ব হলেই গাছ থেকে পেড়ে কৃত্রিমভাবে পাকিয়ে বাজারজাত করে। এ ক্ষেত্রে কার্বাইড ব্যবহার করে তারা। এসব আম স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।

উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির কারণে পিছিয়ে গেলেও উল্টো চিত্র সাতক্ষীরায়। গতবারের তুলনায় দিন দশেক আগেই গাছ থেকে আম নামানোর অনুমোদন দিয়েছে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তারা বলছে, যাচাই-বাছাই করে গত ১ মে থেকে এ অঞ্চলের আম নামানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। এপ্রিলের ২৭ তারিখেই তারা এই অনুমোদন দেয় বলে জানা যায়। এ অঞ্চল থেকে এরই মধ্যে দেশের ও বিদেশের বাজারে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাসসহ কয়েক জাতের আম বাজারজাত হচ্ছে। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১৩ হাজার ১০০ চাষি পাঁচ হাজারের বেশি বাগানে চার হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করেছেন। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল আসলাম কে বলেন, ‘সাতক্ষীরা অঞ্চলের আম একটু আগেই বাজারজাত করা যায়। গত বছর ১০ মের দিকে বাজারজাতের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এবার ১০ দিন আগেই গাছ থেকে আম নামানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক যে অনাবৃষ্টির কারণে আমের বৃদ্ধি কিছুটা কম হয়, তবে উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় আমাদের সে সমস্যায় পড়তে হয়নি। তা ছাড়া অনেকে সেচের মাধ্যমে পানি দিয়েছে। ফলে আমের বৃদ্ধি সময়মতোই হয়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে ১ মে থেকে আম হার্ভেষ্টের অনুমোদন দিয়েছি। তবে এ এলাকার হিমসাগর নামানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২১ মের পর থেকে।’

জানা যায়, চলতি মৌসুমে ল্যাংড়া আম ১ জুন থেকে পাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সাতক্ষীরায়। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়ে অন্তত ১৫ দিন আগে হার্ভেস্টিংয়ের সুবিধা থাকায় সাতক্ষীরার আম রপ্তানিতে বিশেষ গুরুত্ব পায়। মাটি ও আবহাওয়াজনিত কারণে অন্যান্য জেলার তুলনায় কয়েক বছর ধরেই সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। গত ৮ মে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরেলকাতা ইউনিয়নের পুটুনি এলাকার চাষি দাউদ মোল্লার বাগানের গোবিন্দভোগ আম পেড়ে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে চলতি মৌসুমে বিদেশে আম রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *