করোনায়ও রোগীর প্রথম ভরসা নার্স |

নার্স মানেই হাসপাতালে রোগীর পরম স্বজন। যে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রথমেই স্বজনরা রোগীকে সঁপে দেয় কর্তব্যরত নার্সের হাতে। দিন-রাতে যখন প্রয়োজন—ডাক পড়ে নার্সের, তাঁরা ছুটে আসেন রোগীর কাছে। দূরে থাকার উপায় নেই, বরং ক্ষণে ক্ষণে স্পর্শে থাকতে হয় রোগীর। দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ, কখনো ইনজেকশন-স্যালাইন পুশ, ডায়াবেটিস কিংবা রক্তচাপ পরিমাপসহ আরো কিছু কাজ রোগীর স্পর্শে না গিয়ে সম্ভব নয় কারিগরিভাবেই। ফলে চিকিৎসক বা অন্যদের চেয়েও বেশিই রোগীর কাছে থাকেন নার্সরা। 

চলমান করোনা মহামারিতেও ব্যতিক্রমী কিছু দায়িত্বহীনতা ছাড়া বেশির ভাগ নার্সই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই সেবা দিতে গিয়েই এ দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৫ জন নার্স। আক্রান্ত হয়েছেন মোট তিন হাজার জন। এ ছাড়া আক্রান্তদের মাধ্যমে তাঁদের পরিবারেরও অনেকেই সংক্রমিত হয়েছে, মারাও গেছে।

দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মারা যাওয়া নার্স সিলেট শহীদ সামসুদ্দিন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুহুল আমীন। গত বছরের ২৯ মে তাঁর মৃত্যু হয়। রুহুল আমীনের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া একমাত্র সন্তান রাজিমুন হাসান আলিফ কে বলে, ‘গত বছর যখন অনেকেই ভয়ে করোনা ইউনিটে ডিউটিতে যেতে চাইত না, তখন আমার বাবা নিজের জীবন তুচ্ছ করে রোগীদের সেবায় নিয়মিত ডিউটি করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি আক্রান্ত হন এবং মারা যান। মানুষের সেবা করতে গিয়ে আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এটা ভেবে কিছুটা হলেও শান্তি লাগে।’

এতটা ত্যাগ স্বীকার করেও প্রাপ্তি নিয়ে আক্ষেপ আর হতাশা আছে নার্সদের। আছে নানা ধরনের বঞ্চনা ও অবমূল্যায়নের অভিযোগ-অনুযোগ। তাঁদের অভিযোগ—দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে পদের মর্যাদা বাড়ানো হলেও কর্মস্থলে চিকিৎসক, রোগী বা রোগীর স্বজন থেকে শুরু করে সমাজে এখনো রয়ে গেছে আগের মতোই অবজ্ঞা-অবহেলা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নার্সেস দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য—‘নার্সেস; এ ভয়েস টু লিড, এ ভিশন ফর ফিউচার হেলথকেয়ার’।

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসমত আরা পারভীন কে বলেন, ‘দেশে এখন সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছেন ১৪ হাজারের বেশি নার্স। সরকার প্রণোদনার তালিকায় রেখেছে ১৩ হাজার ৪৭২ জন নার্সকে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ২২টি হাসপাতালে মোট দুই হাজার ৫৭২ জনের প্রণোদনা মঞ্জুর হলেও বাকিদেরটা অপেক্ষমাণ।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের মহাসচিব ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, ‘দেশে এখন মোট রেজিস্টার্ড নার্সের সংখ্যা ৭০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সরকারি চাকরিতে আছেন ৩৭ হাজার নার্স। জরুরি ভিত্তিতে দেশে সরকারি পর্যায়ে আরো ১৫ থেকে ২০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া দরকার। কারণ নার্সরা টানা ডিউটি করায় অনেকেই অসুস্থ থাকছেন। এর ওপর করোনা সংক্রমণ ভারতের মতো অবস্থায় চলে গেলে নার্সসংকট চরম আকার ধারণ করবে।’


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *