কুষ্টিয়া বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় |

সমাজের চোখে তারা ‘বোঝা’। কিন্তু তাদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ এই দুর্নাম ঘোচাতে পারে। কুষ্টিয়া বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় থেকে নাচ-গান, খেলাধুলাসহ দর্জিবিজ্ঞান ইত্যাদিতে পারদর্শী হয়ে উঠছে প্রতিবন্ধীরা। লেখাপড়ায় প্রাথমিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে আত্মনির্ভর হচ্ছে; নানাভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তারা। অথচ বিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। খেলাধুলার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত স্কুল ভ্যান নেই।

বর্তমানে স্কুলটিতে ছয়টি শ্রেণিতে ১২৯ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১৩। অথচ তিন কক্ষের পুরনো ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

১৯৮৭ সালের ১ মার্চ কুষ্টিয়া শহরে স্কাউট ভবনে এই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুলটিতে শুরুতে ছিল ১১ জন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষিকা দুজন। ২০০০ সালে শহরের হাউজিং এস্টেটে জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ করা দুই বিঘা জমির ওপর পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে একতলার একটি ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ২০০২ সাল থেকে সেখানেই চলছে এর কার্যক্রম। ভবনটির চারদিকে দেয়ালও নেই। ফলে অনেকটাই অরক্ষিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০১৯ সালে আবুধাবীতে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিয়ে ৯টি স্বর্ণপদক লাভ করে। এর আগে ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বৌচি খেলায় অংশ নিয়ে এই স্কুলের তাসলিমা, ২০১৫ সালে আমেরিকায় সামার গেমসের অ্যাথলেটে অংশ নিয়ে কাকলী এবং ২০১১ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকে অ্যাথলেট হিসেবে তনু এবং ফুটবলে আলমগীর স্বর্ণপদক পায়।

শিক্ষকরা জানান, প্রতি শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে তাদের পাঠদান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হোমবেজ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষিকারা তাদের বাড়িতে যান এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে ধারণা ও প্রশিক্ষণ দেন।

স্কুলের সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বিয়ে ও বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে স্কুলের ৩৫ জন প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তবে স্কুলটিতে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। সমাজের দানশীল ও বিত্তবান ব্যক্তিরাই শুরু থেকে স্কুলের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন-ভাতা দিলেও অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা তাঁরা পান না। 

সম্প্রতি স্কুলটিতে গিয়ে কথা হয় শিশু শ্রেণির ছাত্রী ইরিনের সঙ্গে। সে জানায়, বড় হয়ে নৃত্যশিল্পী হবে। আর স্কুলের প্রবীণ ছাত্র শহরের কোটপাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন জানান, স্কুলে এলে তাঁর খুবই ভালো লাগে। বাইরের মানুষের চেয়ে স্কুলের বন্ধুরা এবং শিক্ষকরা তাঁকে অনেক ভালোবাসেন।

জানা গেল, শিক্ষার্থী সিজার বর্তমানে স্কুলের অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের গান শেখায়। কয়েক বছর আগে সে সুইট বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ঢাকায় দেশ গানে প্রথম হয়েছিল।

প্রধান শিক্ষিকা আসমা আনসারী জানান, ক্লাসরুমের সংকট, ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলার সরঞ্জামের অভাব, স্কুল ভ্যানের অভাবসহ আর্থিক অনটনে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।


Source: Kalerkantho.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *