কলকাতাকে ৬ উইকেটে হারালো রাজস্থান

মুম্বাই, ২৫ এপ্রিল – দুর্দান্ত বোলিংয়ে আসল কাজটা আগেই সেরে রেখেছিলেন ক্রিস মরিস ও মোস্তাফিজুর রহমান। পরে ব্যাট হাতে বাকি কাজ সারেন সাঞ্জু স্যামসন।

এই তিনজনের ধারালো পারফরম্যান্সে ভর করে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে সহজেই হারালো রাজস্থান রয়্যালস।

শনিবার রাতে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কলকাতাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে রাজস্থান। শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রান সংগ্রহ করে কলকাতা। জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে ৭ বল বাকি থাকতেই জিতে যায় রাজস্থান।

এই নিয়ে ৫ ম্যাচে দ্বিতীয় জয়ে আইপিএলের পয়েন্ট টেবিলের আট থেকে ছয়ে উঠে এসেছেন মোস্তাফিজরা। আর সমান ম্যাচে ১ জয় নিয়ে কলকাতা সাত থেকে নেমে গেছে সবার নিচে।

কলকাতার ছুড়ে দেওয়া মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা তেমন ভালো হয়নি রাজস্থানেরও। ওপেনার জস বাটলার ফিরে গেছেন মাত্র ৫ রান করে। তিনে নামা জইশওয়ালও সুবিধা করতে পারেননি। ১৭ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলে তিনি শিভম মাভির শিকার হয়েছেন। তবে অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন ও শিভম দুবে মিলে ৪৫ রানের জুটি গড়ে ধাক্কা সামাল দেন।

মূলত কলকাতার শিভম মাভি ও সুনীল নারাইন শুরুতে রাজস্থানের রানের চাকা আটকে রাখেন। মাভি ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচ করেছেন। ৪ ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও ক্যারিবীয় স্পিনার নারাইন খরচ করেছেন মাত্র ২০ রান। তবে বাকিদের ব্যর্থতায় তাদের এই অবদান শেষ পর্যন্ত দলের জন্য যথেষ্ট প্রতীয়মান হয়নি।

দুবে ১৮ বলে ২২ রান করে আউট হওয়ার পর ১৫ রান যোগ হতেই বিদায় নেন রাহুল তেওয়াতিয়া (৫)। ততক্ষণে অবশ্য স্কোর বোর্ডে ১০০ রান তুলে ফেলেছে রাজস্থান। জয় পেতে তখন বলের চেয়ে কম রান দরকার। হাতে আছে ৬ উইকেট। শেষ ৫ ওভারে সমীকরণ দাঁড়ায় বলপ্রতি ১ রান করে। ডেভিড মিলারকে নিয়ে সেই সমীকরণ আরও সহজ করে ফেলেন স্যামসন। ৪১ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন রাজস্থানের অধিনায়ক। ২৩ বলে ৩ চারে ২৪ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন মিলার।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে মরিস ও মোস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে রান তুলতে খাবি খেয়েছেন কলকাতার ব্যাটসম্যানরা। দলীয় ২৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো কলকাতা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে। জস বাটলারের দারুণ দক্ষতায় রান আউটের শিকার হন শুভমান গিল (১১)। আরেক ওপেনার নিতিশ রানা ২৫ বলে করেছেন ২২ রান।

কলকাতার হয়ে ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থ হয়েছেন সাকিবের বদলে সুযোগ পাওয়া সুনীল নারাইন (৬)। অধিনায়ক মরগ্যান তো কোনো বলের মুখোমুখি হওয়ার আগেই ক্রিস মরিসের হাতে রান আউট হয়ে ফিরেছেন। স্রোতের বিপরীতে রাহুল ত্রিপাঠী ২৬ বলে খেলেছেন ৩৬ রানের ইনিংস। তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি মোস্তাফিজ। এছাড়া শেষদিকে ২৪ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলেছেন দীনেশ কার্ত্তিক।

বল হাতে একাই ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন রাজস্থানের মরিস। আইপিএলের সবচেয়ে দামি এই খেলোয়াড় রান খরচেও ছিলেন কৃপণ। শেষ ওভারে ২ উইকেট তুলে নেওয়া এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার ৪ ওভারে খরচ করেছেন মাত্র ২৩ রান। তবে বোলিংয়ে রাজস্থানের আড়ালের নায়ক মোস্তাফিজ।

মাত্র ১ উইকেট পেলেও বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন মোস্তাফিজ। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন তিনি। ওভারের পঞ্চম বলে দারুণ এক কাটার ছুড়েছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। আর তাতে ধোঁকা খেয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন কলকাতার ওপেনার শুভমান গিল। কভার থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে দুই হাতে বল প্রায় তালুবন্দি করেই ফেলেছিলেন ফিল্ডার ইয়াশাসভি জইসওয়াল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি।

প্রথম ওভারে ৭ রান খরচ করা ফিজ নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। ওই ওভারের চতুর্থ বলে রান আউটের শিকার হন শুভমান। ওভার থেকে আসে মাত্র ২ রান। এরপর নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের দেখা পান মোস্তাফিজ। তার স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে স্লগ করেন রাহুল ত্রিপাঠী। ডিপ স্কয়ারে থাকা রায়ান পরাগ সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেননি। এই রাহুল আবার কলকাতার ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও।

৩ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচ করে ১ উইকেট নেওয়া ফিজ ইনিংসের ১৯তম ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও ৯ রান খরচ করেন। মূলত কলকাতার ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলার কাজটা তিনিই করেন। আর সেই চাপ কাজে লাগিয়ে উইকেট তুলে নেন মরিস। মোস্তাফিজ এমনকি কোনো ওয়াইড ও নো-বলও দেননি। রান খরচ করেছেন ওভারপিছু ৫.৫০ করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কলকাতা নাইট রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৩৩/৯ (ত্রিপাঠী ৩৬, কার্ত্তিক ২৫, রানা ২২; মরিস ২৩/৪, মোস্তাফিজ ২২/১, উনাদকাট ২৫/১, সাকারিয়া ৩১/১)

রাজস্থান রয়্যালস: ১৮.৫ ওভারে ১৩৪/৪ (বরুণ চক্রবর্তী ৩২/২, মাভি ১৯/১, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ৩ ওভারে ২০/১)

ফলাফল: রাজস্থান ৬ উইকেটে জয়ী।

সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ
এন এইচ, ২৫ এপ্রিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *