ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ |

পেঁয়াজ আমদানিতে আইপি বা আমদানির অনুমতি সনদ দেওয়া বন্ধ রাখায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা একেবারে কমে গেছে। এখন যে পেঁয়াজ আসছে সেগুলো গত ডিসেম্বরে অনুমোদিত। মূলত দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ তথা কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে নতুন করে আমদানির অনুমতি বন্ধ রেখেছে সরকার। কৃষি বিভাগ নতুন করে আমদানির অনুমতি না দিলে অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ সনদ নবায়ন না করলে চলতি এপ্রিল মাসের পর ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা পুরোপুরি বন্ধ হবে।

সরকারের কৃষি বিভাগ চাইছে এই মৌসুমে ভারত থেকে নতুন করে পেঁয়াজ না আসুক। কারণ দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হয়েছে; আর সেগুলো চলবে আগামী আগস্ট পর্যন্ত। তত দিন পর্যন্ত কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে রমজানে বাজার অস্থির হওয়ার শঙ্কায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য নতুন করে আবেদন করেছেন ব্যবসায়ীরা; প্রচুর আবেদন পড়েছে সনদ নবায়নের। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা না থাকায় কৃষি বিভাগ নতুন অনুমোদন দিচ্ছে না।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক রায়হান ট্রেডার্সের মালিক শহীদুল ইসলাম কে বলেন, ‘আমি ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো অনুমোদন পাইনি। কবে নাগাদ পাব তারও নিশ্চয়তা নেই। ভারত থেকে আমদানি একেবারে কমে যাওয়ায় রমজানের আগেই স্থলবন্দরে দাম বেড়েছে।’ আমদানির পক্ষে জোর দিয়ে তিনি বলেন, সরকার তো কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে শুল্কহার বাড়িয়েছে। সুতরাং আমদানি বন্ধ রাখলে সেই সুযোগে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। তখন ব্যবসায়ীদেরই বদনাম শুনতে হবে।

পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি সনদ নিতে হয় কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ দপ্তরের। দপ্তরের নতুন পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন কে বলেন, ‘ডিসেম্বরের পর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছি না। মেয়াদোত্তীর্ণ আমদানির সনদও নবায়ন করছি না। আগের সনদ দিয়ে সর্বোচ্চ এপ্রিল পর্যন্ত পেঁয়াজ আনা সম্ভব। কারণ একটি অনুমতি সনদের মেয়াদ থাকে চার মাস। এরপর আমরা নবায়ন না করলে এপ্রিলের পর থেকে আমদানি পেঁয়াজ আসার সুযোগ নেই। দেশের কৃষকদের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত।’

আমদানির অনুমতি সনদ নিয়ে ভারত থেকে এসব পেঁয়াজ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে দেশে পৌঁছায়। এক হিসাবে দেখা যায়, চলতি বছরের ২২ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪ কর্মদিবসে মোট ২৮ হাজার ৮৮২ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। অর্থাৎ দিনে দুই হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিপুল আইপি জমা পড়েছে, সনদ নবায়নেরও আবেদন জমা পড়েছে। আমরা চাইছি এপ্রিল পর্যন্ত দুই হাজার থেকে তিন হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হোক। তাহলে রমজানে বাজার অস্থির করার সুযোগ পাবে না কেউ। এরপর পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’

বাজারে এখন ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ প্রতিযোগিতায় আছে। শবেবরাতের পর এবং করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অঘোষিত লকডাউন শুরুর আগের দিন পেঁয়াজের বাজারে কিছুটা দাম বাড়লেও এখন সেটি কেটে গেছে। খাতুনগঞ্জের বাজারে পাইকারিতে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ ২৮ টাকা, খাসখালী জাতের ২৫ টাকা এবং দেশি মেহেরপুরের পেঁয়াজ ২৪ টাকা, ফরিদপুর ও পাবনার পেঁয়াজ ২৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে খাতুনগঞ্জের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ থাকলে সেই সুযোগ কিছু ব্যবসায়ী নেবেন। তখন তাঁরা দেশি পেঁয়াজ কিনে গুদামজাত করে বাজারে অস্থিরতা করবেন না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? এ জন্য পুরোপুরি বন্ধ না রেখে নিয়ন্ত্রিতভাবে আমদানি সচল রাখা উচিত।

জানা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের মৌসুমে ভারত সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়। সেই পেঁয়াজ দেশে আসার পর বাংলাদেশি কৃষকরা উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পেরে মার খান; পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহ হারান। এবারও সেই ধারাবাহিকতা ছিল; কিন্তু সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কৃষকদের সুরক্ষা দিতে এবং পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো নিশ্চিত করতে একটি সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। সেটি হলো, সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলেও শুল্ক আরোপ করেছে। এবারই প্রথম ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক এবং ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই শর্ত মেনে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম পড়ছিল কেজিতে ৪৭ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকায়। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মার্চ মাসে ভারতে পেঁয়াজের কেনা মূল্য কমে যাওয়ায় এবং বাংলাদেশে মুড়িকাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়ার সুযোগে ভারতীয় পেঁয়াজ আবারও আসা শুরু হয়।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *