শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় নারী নেত্রী রাখী দাশ পুরকায়স্থকে স্মরণ |

বিশিষ্ট নারী নেত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রাখী দাশ পুরকায়স্থকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন তাঁর সুহৃদ ও সহযোদ্ধারা। তারা বলেছেন, তিনি (রাখী) ছিলেন দেশপ্রেমিক, দক্ষ সংগঠক। কাজের প্রতি তাঁর ছিলেন প্রবল ঝোঁক। টেকসই নারী আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে তিনি ছিলেন আপোষহীন। যা নতুন প্রজন্মের জন্য প্রেরণার হয়ে আছে।

আজ শনিবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল স্মরণ সভায় তারা একথা বলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং-এর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপ-পরিচালক শহনাজ সুমি’র সঞ্চালনায় সভায় বক্তৃতা করেন রাখী দাশ পুরকায়স্থের জীবনসঙ্গী ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সাম্পাদক সীমা মোসলেম, বাংলাদেশ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নূর মোহাম্মদ তালুকদার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সভানেত্রী চৈতালী ত্রিপুরা।

বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী জান্নাত-এ-ফেরদৌসী লাকী’র পরিবেশিত গানের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সভায় জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন আবৃত্তিকার রূপশ্রী চক্রবর্তী। সভায় যুক্ত ছিলেন রাখী দাশ পুরকায়স্থের বোনের কন্যা দেবারতি ভৌমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক জোবাইদা নাসরীণ কণা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি অ্যাডভোকেট তবারক হুসাইন প্রমুখ।

সভায় সুলাতানা কামাল বলেন, রাখী দাশ আমার কাছে একজন নারী আন্দোলনের কর্মী। আমার মা’ (কবি সুফিয়া কামাল) এর সাথে তাঁদের ছিল সাংগঠনিক যোগাযোগ। তাঁর মৃত্যুতে একজন বন্ধুকে যেমন হারিয়েছি, তেমনি নারী আন্দোলন ও মানবাধিকার আন্দোলনের এক সাহসী নেতাকে হারিয়েছি।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, আমার জীবনের যা কিছু অর্জন সবকিছুর পেছনে রাখী জড়িত। সার্বক্ষণিক রাজনীতির সাথে নিবিড়ভাবে আমার জড়িত থাকার পেছনে তার অবদান অনেক। তাঁকে হারিয়ে আমি অভিভাবকহীন। মানব সংগ্রামের যে লড়াই তিনি করে গেছেন সে লড়াই পরবর্তী প্রজন্ম এগিয়ে নিবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নারী নেত্রী সীমা মোসলেম বলেন, ছাত্র জীবনে ছাত্র ই্উনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়া, মুক্তিযুদ্ধের জন্য ট্রেনিং নেওয়াসহ মহিলা পরিষদের সাথে যুক্ত হওয়া। তাঁর সাথে নানা বর্ণাঢ্য স্মৃতি রয়েছে। তাঁর সাধনার মূলে ছিল প্রগতিশীলতা এবং সমাজ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা।

সভায় বক্তারা বলেন, রাখী দাশ নিজের প্রতি তাঁর উদাসীনতা থাকলেও সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা। তাই মেহনতী, পাহাড়ী, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগণের সংগ্রামে তিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের নারী জাগরণের লড়াই এবং প্রগতিশীল রাজনীতিতে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য যে, গত বছর করোনা মহামারীর মধ্যে ৬৮ বছর বয়সে ভারতের গুয়াহাটির অ্যাপলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিশিষ্ট নারী নেত্রী রাখী দাশ পুরকায়স্থ।

ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের পরপর তিনবারের নির্বাচিত ভিপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও নেন তিনি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের নির্বাচিত সহ-সভাপতিও ছিলেন তিনি। চাকরি জীবনে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের যুগ্ম সচিব। সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল নারী আন্দোলনে। সর্বশেষ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণসম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই নারী নেত্রী।


Source: kalerkantho

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *